‘তদন্তে বাধা দিতে’ মুলারকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প

নির্বাচন ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবিরের আঁতাতের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিশেষ কাউন্সিলর রবার্ট মুলারকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2019, 05:51 AM
Updated : 19 April 2019, 05:51 AM

যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে প্রায় ২২ মাস তদন্তের পর গত মার্চে মুলার কংগ্রেসে তার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। ২৪ মার্চ মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার ওই তদন্ত প্রতিবেদনের একটি সারসংক্ষেপ কংগ্রেসের সামনে উপস্থাপন করেছিলেন ।

সংক্ষিপ্ত ওই প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের নির্বাচন ঘিরে ট্রাম্প-রাশিয়া আঁতাতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়। যদিও এই ২২ মাসে ট্রাম্পের সাবেক ছয়জন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে বিচারের মুখোমুখি করেছেন মুলার, কয়েকজনকে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে।

মুলার তার প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অপরাধ করেছেন- এরকম কোনো উপসংহার এই প্রতিবেদন টানছে না। তবে এই প্রতিবেদন তাকে দায়মুক্তিও দিচ্ছে না।”

কংগ্রেসের সামনে বৃহস্পতিবার মুলারের ৪৪৮ পাতার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনে কী আছে?

মুলারের তদন্ত প্রতিবেদনে নির্বাচন ঘিরে ট্রাম্পের প্রচার শিবির ও রাশিয়ার মধ্যে আঁতাতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলা হয়। তবে এও বলা হয়, ট্রাম্প এই তদন্তে বাধা দেওয়া চেষ্টা করেছিলেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো উপসংহারে তারা পৌঁছাতে পারেননি।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়:

# ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের এক আইনজীবীকে বলেছিলেন, ‘স্বার্থের দ্বন্দ্বের’ অভিযোগ তুলে তিনি যেন মুলারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ‘ট্রাম্পের ওই নির্দেশ পালনের ইচ্ছা না থাকায়’ ওই আইনজীবী পদত্যাগ করেন।

# তদন্তের ঘোষণা দেওয়ার পর ট্রাম্প বারবার এটা নিয়ে খেদোক্তি করেছেন। তিনি এমনও বলেছেন, “হা ঈশ্বর, এটা ভয়ঙ্কর। আমার প্রেসিডেন্টের মেয়াদ এখানেই শেষ।”

# প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউজের সদস্যরা তার ‘নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি’ জানানোয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিচার প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য যে বাধা দিতে চেয়েছিলেন তা ব্যর্থ হয়েছে।

ডেমোক্রেটরা কী বলছেন?

মুলারের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুই কংগ্রেসনাল ডেমোক্রেটিক নেতা ন্যান্সি পেলোসি ও চাক স্চুমার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ওই প্রতিবেদনে ‘একজন প্রেসিডেন্টের বিরক্তিকর ভাবমূর্তির চিত্র ফুটে উঠেছে। যিনি দিনের পর দিন প্রতারণা, মিথ্যা ও অসংযত আচরণ করে আসছেন’।

তারা তদন্ত কাজে ট্রাম্পের বাধা দেওয়ার চেষ্টার বিষয়ে মুলারকে কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দেওয়া উচিত’ বলেও মনে করেন।

কংগ্রেস সদস্য জ্যাকি স্পেইর বিবিসিকে বলেন, “মুলার আসলে বল কংগ্রের দিকে ঠেলে দিয়েছেন এবং বলতে চাইছেন, ‘এখানে বিচারে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আপনাদের খুঁজে দেখা প্রয়োজন’।”

এদিন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের সমালোচনাও করেছেন ডেমোক্রেটিক নেতারা।

তাদের অভিযোগ, বার গত মার্চে মুলারের তদন্ত প্রতিবেদনের যে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছেন তা  কংগ্রেসকে ‘ভুল দিশা’ দিয়েছে। সেখানে ট্রাম্পের বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়নি।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রাস্তব উপস্থাপনে মুলারের তদন্ত প্রতিবেদনকে সম্ভাব্য হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করছিলেন ডেমোক্রেটিক নেতারা। যদিও আপাতত এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই। 

ডেমোক্রেটিক হাউজ মেজরিটি লিডার স্টেনি হোয়ার বলেন, এই মুহূর্তে এটা ‘উপযুক্ত’ নয়।

“সত্যি বলতে, মাত্র ১৮ মাস পর পরবর্তী নির্বাচন এবং আমেরিকার জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।”

কেন এই তদন্ত:

অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নিউ ইয়র্কের ধনকুবের রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত ছিলেন।

রাশিয়া নির্বাচনের আগে থেকেই প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়ায় তাদের মধ্যে আঁতাতের সন্দেহ জোরালো হয়ে উঠেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও বলা হয়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল রিপাবলিকানদের পক্ষে নিতে রাশিয়া গোপন কোনো ষড়যন্ত্র করেছিল বলে তারা মনে করছে।

বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছিলেন এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান জেমস কোমি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে বরখাস্ত করলে একজন বিশেষ কাউন্সিলর নিয়োগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। কংগ্রেসে ডেমোক্রেট দলীয় সদস্যদের এই স্বাধীন তদন্তের দাবি ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির কিছু সদস্যেরও সমর্থন পায়।

তখনই এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান রবার্ট মুলারকে বিশেষ কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োগ দেয় মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রচার শিবির ও রাশিয়ার মধ্যে কোনো আঁতাত হয়েছিল কিনা- তা খতিয়ে দেখার ভার দেওয়া হয় তার ওপর।

পাশাপাশি এ বিষয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) তদন্তকে ট্রাম্প বাধাগ্রস্ত করেছিলেন কিনা এবং এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকে ওই তদন্তের কারণেই বরখাস্ত করা হয়েছিল কিনা- তাও খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় মুলারকে।

মুলারের দল গত ২২ মার্চ তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর দিন প্রায় নয় ঘণ্টা ধরে তা পড়ে সারসংক্ষেপ তৈরি করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার।