ভারতে দ্বিতীয় পর্বের ভোটেও উত্তাপ-সহিংসতা-ইভিএম বিভ্রাট

ভারতে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে শেষ হওয়া প্রথম পর্বের ভোটের মত অনেকটা একই পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে দ্বিতীয় পর্বের ভোটেও।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2019, 12:42 PM
Updated : 18 April 2019, 02:12 PM

বিচ্ছিন্ন নানা ঘটনা, অভিযোগ, সহিংসতা, গুলি, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, মাওবাদী হামলা এবং ইভিএম বিভ্রাটের মধ্য দিয়ে চলেছে ভোটগ্রহণ।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ১১টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের ৯৫টি পার্লামেন্ট আসনে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিন তামিল নাডুর ৩৮টি লোকসভা আসনের পাশাপাশি রাজ্য বিধানসভার ১৮টি আসনের নির্বাচনের ভোটও গ্রহণ করা হচ্ছে। উড়িষ্যায় লোকসভার পাঁচটি আসনে ও বিধানসভার ৩৫টি আসনে ভোট হচ্ছে।

এর পাশাপাশি কর্নাটকে লোকসভার ১৪টি আসনে, মহারাষ্ট্রের ১০টি আসনে, উত্তর প্রদেশের আটটি, পাঁচটি করে আসাম ও বিহারে, তিনটি করে ছত্তিসগড় এবং পশ্চিমবঙ্গে, জম্মু ও কাশ্মীরের দুটি ও  মনিপুর ও পুদুচেরির একটি করে লোকসভা আসনে ভোট হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটে সংঘর্ষ:

পশ্চিমবঙ্গে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ করা হয়। এ রাজ্যে ৪২ আসনের ভোট নেওয়া হয়েছে দার্জিলিং, রায়গঞ্জ এবং জলপাইগুড়িতে। সারাদিনের ভোটে বিভিন্নস্থানে সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন আহত হওয়ার খবর এসেছে।

অশান্তি সৃষ্টির জেরে ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, দার্জিলিংসহ অন্যান্য স্থানে সকাল ৭ টা থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অশান্তি শুরু হয়। উত্তপ্ত হতে শুরু করে রায়গঞ্জ এবং দার্জিলিং আসনের বেশ কিছু এলাকা।

দার্জিলিংয়ের চোপড়ায় ক্ষমতাসীন তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সড়ক অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। এর আগে রায়গঞ্জের ইসলামপুরে একটি এলাকার স্থানীয় এক টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহক মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় আরো অনেকে আহত হয়েছেন। তাছাড়া, ইসলামপুরে সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের গাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ এসেছে।

বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ জলপাইগুড়ির ঘুঘুডাঙায় একটি বুথে গোলমালের অভিযোগ আসে। বুথের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের লক্ষ্য করে গুলিও চালানো হয়েছে বলে খবর এসেছে। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরাই এ গুলি চালিয়েছেন।

ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এসেছে দার্জিলিঙ কেন্দ্রের চোপড়ায়।  দু-তিনজন ভোটারকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ তোলেন গ্রামবাসী ভোটাররা। শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বাসিন্দারা। উত্তেজিত বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাঁদানে গ্যাস ‍ছুড়েও তাদের নিবৃত্ত করতে পারেনি। গোলমালের ৪ ঘণ্টা পর চোপড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছলে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ বন্ধ করে।

ধূপগুড়ির বারঘুড়িয়ায় ভোট ঘিরে অশান্তির খবর এসেছে এবং মালবাজারে বিজেপি অফিস ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ এবং দার্জিলিং- এ ৩ টি আসনে  রাজ্যের প্রধান চার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি, বামফ্রন্ট এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

ছত্তিসগড়ে মাওবাদী হামলা:

ভোটের মধ্যেই ছত্তিসড়ড়ে রাজনন্দগাঁও কেন্দ্রের কোরাচা-মনপুর রাস্তায় সকাল ১১ টার দিকে একটি টহল ভ্যান লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে মাওবাদীরা। এ  ঘটনায় এক জওয়ান সামান্য আহত হয়েছেন।

দ্বিতীয় দফায় ছত্তিসগড়ের তিন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও সেখানে মাওবাদীদের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

উত্তরপ্রদেশে উত্তেজনা:

বোরখা পরে বুথে আসা ভোটারদের পরিচয় যাচাই না করেই ভোট দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশের আমরোহা কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী একটি বুথে গিয়ে অভিযোগ করেন,  বোরখা পরে যারা ভোট দিতে আসছে তাদের পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে না।” এ অভিযোগের পরই উত্তেজনা ছড়ায় বুথে। বিজেপি এবং সমাজবাদী পার্টি বহুজন সমাজ পার্টির জোটের সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানিয়েছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।

জম্মু ও কাশ্মীরে সহিংসতা:

জম্মু ও কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নির্বাচন বয়কটের ডাক দেওয়ায় সেখানে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার খবর এসেছে। শ্রীনগরে পুলিশ বিক্ষুব্ধ লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। অন্তত ৪০ টি স্থানে বিক্ষুব্ধরা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়েছে বলে জানিয়েছে ঊর্ধতন এক পুলিশ কর্মকর্তা।

ইভিএম-ভিভিপ্যাট বিভ্রাট:

ভোট শুরু হতেই বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক বুথ থেকে ইভিএম-ভিভিপ্যাট বিকলের এসেছে। তবে সময়মই এর  বিকল্প ভোটযন্ত্রের ব্যবস্থা করছেন নির্বাচন কমিশন।

মহারাষ্ট্রের বীড় লোকসভা কেন্দ্রের পাঁচটি বুথে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট বিকল হয়ে পড়ার খবর এসেছে। ভোটের শুরু থেকেই কেন্দ্রের কয়েকটি বুথে  ইভিএম অকেজো হয়ে পড়ে।

ওদিকে, ভোট শুরুর কিছুক্ষণ পরই আসামের শিলচরের একটি বুথে ভিভিপ্যাট খারাপ হয়ে যায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা পাল্টানো হয়। এছাড়া, তামিলনাড়ু, বিহার, উত্তরপ্রদেশের দু’-একটি বুথেও ইভিএম ও ভিভিপ্যাটে সমস্যা দেখা দেয়।

পশ্চিমবঙ্গে সকালে ভোট দিতে গিয়ে ইভিএম বিভ্রাটের মুখে পড়তে হয় রায়গঞ্জের এক কংগ্রেস প্রার্থীকে। ওদিকে ইসলামপুরের একটি বুথে ভিভিপ্যাট বিকল হয়ে পড়ায় এক তৃণমূলপ্রার্থীকে অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়। ইভিএম খারাপের অভিযোগ আসে শিলিগুড়ি বুথেও। ফলে ভোট শুরু হতে ১ ঘণ্টা দেরী হয় সেখানেও।

ভোটচিত্র:

দ্বিতীয় দফায় সবচেয়ে বেশি আসনে ভোট হচ্ছে তামিলনাড়ুতে। ৩৯টি আসনের মধ্যে ৩৮টি আসনেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে। গোটা তামিলনাড়ুতে এক দফায়ই ভোট নেওয়া হচ্ছে।

এর পর কর্নাটকে ২৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে অর্ধেক আসনেই ভোটপর্ব সারা হচ্ছে এই পর্বে। তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে বাকি ১৪টি আসনে। রাজনৈতিক দিক থেকেও কর্নাটক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কংগ্রেস-জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিএস)-এর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। পশ্চিমবঙ্গের মতো এ রাজ্যেও সাত দফায় ভোটগ্রহণ হবে। তবে আসন সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। ৮০টি আসনের মধ্যে প্রথম দফায় আটটি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। দ্বিতীয় দফাতেও আটটি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

 বিহারের পাঁচটি আসনের ভোটগ্রহণের উপরও নজর রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।এর পর মহারাষ্ট্রে দ্বিতীয় দফায় হচ্ছে ১০টি আসনের ভোট। এ রাজ্যে ৪৮ আসনের ভোট হবে চারদফায়।

এরপর আছে আসাম, বিহার, ছত্তিসগড়, জম্মু-কাশ্মীর, মণিপুর, ওড়িশা পুদুচেরি, এবং পশ্চিমবঙ্গ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ত্রিপুরা পূর্ব কেন্দ্রের ভোট পিছিয়ে গিয়েছে। ভোট নেওয়া হবে পরের দফায়।