সম্ভবত দুর্ঘটনা থেকেই আগুন নতর-দাম ক্যাথেড্রালে

প্যারিসের বিশ্ববিখ্যাত নতর-দাম ক্যাথেড্রালে সম্ভবত দুর্ঘটনাবশত আগুন লেগেছে। ফরাসি কৌসুঁলিরা একথা বলেছেন।

>>রয়টার্স
Published : 16 April 2019, 02:30 PM
Updated : 16 April 2019, 02:30 PM

মঙ্গলবার প্যারিসের পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা মনে করছি দুঘর্টনা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এমন কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ পাওয়া যায়নি। দমকলকর্মীরা ১৪ ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর জন্য কাজ করেছে।”

৫০ সদস্যের একটি তদন্তদল এখনো ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আটশ’ বছরের পুরাতন নতর-দাম ক্যাথেড্রালে সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন লাগে।

অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর চার শতাধিক সদস্য রাতভর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।

ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র বলেন, “আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। আজ আমরা ভবনের কাঠামো এবং আগুনে পোড়া অংশের কী অবস্থা সেটি পর্যবেক্ষণ করছি।”

যখন আগুন লাগে তার আগেই ক্যাথেড্রালটি ওই দিনের মত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যে কারণে আগুনে কেউ হতাহত হননি। তবে আগুন নেভানোর কাজ করার সময় একজন দমকলকর্মী আহত হয়েছেন।

ক্যাথেড্রালের যে অংশটি আগুনে পুড়ে গেছে নিরাপত্তার কারণে তদন্তদল সেখানে এখনো প্রবেশ করতে পারেনি।

পাথরে তৈরি ভবনের দেয়াল ঠাণ্ডা হওয়ার পর এবং পুড়ে যাওয়া অংশ ধসে পড়বে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল তদন্তদল সেখানে প্রবেশের অনুমতি পাবে।

আগুন লাগার পরপরই গির্জায় থাকা মূল্যবান চিত্রকর্মগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন প্যারিসের মেয়র অ্যান হিদালগো।

রক্ষা করা মূল্যবান সামগ্রী মধ্যে খ্রিস্টানদের কাছে মহাপবিত্র ‘ক্রাউন অব থর্নস’ও রয়েছে।

খ্রিস্টান ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, যিশু খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করার সময় তার মাথায় এই কণ্টক মুকুটটি ছিল। ফরাসি সম্রাট নবম লুই দ্বাদশ শতকে বায়েজেনটাইন সম্রাটের কাছ থেকে এটি উপহার পান।

খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে শুরু হয়েছিল নতর-দাম ক্যাথেড্রালের নির্মাণ, একশ বছর লেগেছিল এই কাজ শেষ করতে। তারপর কয়েকবার এর সংস্কার হয়েছিল।

ফরাসি বিপ্লবের সময় এই ক্যাথেড্রাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দীন-হীন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ভিক্তর উগোর জগদ্বিখ্যাত উপন্যাস হ্যাঞ্চব্যাক অফ নতরদাম বা নতরদামের কুঁজো প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই নতুন করে আবিষ্কার করে এই গির্জাকে।

এরপর এটি সংস্কারে বড় উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৮৪৫ সালে, ২৫ বছর কাজের পর পুনরায় দৃষ্টিনন্দন অবস্থায় ফেরে ইউরোপে মধ্যযুগের শেষার্ধ্বের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনা।

তবে কিছুকাল আগে ভবনের বিভিন্ন অংশের পাথরে ফাটল ধরায় শঙ্কা তৈরি হয় ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য এই ভবনটি নিয়ে।

গত বছর ফ্রান্সের কাথলিক চার্চগুলো নতর-দাম কাথেড্রাল রক্ষায় তহবিল যোগাতে ফ্রান্সের সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। সংস্কার কাজ করতে গিয়েই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সংস্কার শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে বলেও প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।