মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিচার শুরু

পুরো বিশ্বকে হতবাক করা বড় ধরনের একটি আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তার ভূমিকার জন্য মালেশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিচার শুরু হয়েছে।   

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2019, 06:18 AM
Updated : 3 April 2019, 06:31 AM

নাজিব রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বরহাদ (ওয়ানএমডিবি) থেকে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ, অপরদিকে তিনি কোনো অন্যায় করেননি বলে দাবি নাজিবের।

কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে আরও জোরদার করার জন্য রাষ্ট্রীয় ওই তহবিলটি গঠন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

তার বদলে এই তহবিলের অর্থ বিলাসী জীবনযাপন, হলিউডের একটি চলচ্চিত্র ও একটি সুপারইয়টের পেছনে ব্যায় করা হয় বলে অভিযোগ।

নাজিবের বিরুদ্ধে অনেকগুলো ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু ওই আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে এবারই প্রথম বিস্তৃত বিচার শুরু হলো।

মোট ৪২টি অভিযোগের মোকাবিলা করছেন নাজিব, এর অধিকাংশই ওয়ানএমডিবি-র সঙ্গে সম্পর্কিত।  

বুধবার এ সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি অভিযোগের বিচার শুরু হয়েছে। এর কেন্দ্রে আছে ওয়ানএমডিবি-র একটি ইউনিট এসআরসি ইন্টারন্যাশনাল থেকে নাজিবের ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে চার কোটি ২০ লাখ মালয়েশীয় রিঙ্গিত সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ।

মায়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নাজিব রাজাক ও স্ত্রী রোসমাহ মনসুর। ছবি রয়টার্স

এ মামলায় অর্থ পাচারের তিনটি, শপথ ভঙ্গের দায়ে তিনিটি ফৌজদারি অভিযোগ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত একটি অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগে নাজিব নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

এ মামলাটি যে অর্থ সরানো নিয়ে তা নাজিবের আত্মসাৎ করা ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের অতিরিক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে।       

নাজিবের মামলার শুনানি ১২ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এ মামলা সংক্রান্ত আবেদনগুলোর শুনানিতে সময় লাগায় মামলা শুরু হতে দেরি হয়।

ওয়ানএমডিবি-র জন্য অর্থ সংগ্রহকালে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার জন্য ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্সের বিরুদ্ধেও ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছে মালয়েশিয়া সরকার।

তারা কোনো অপরাধ করেনি বলে দাবি করেছে ব্যাংকটি এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ‘জোরালোভাবে মোকাবিলা করা হবে’ বলে জানিয়েছে তারা।

রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে চুরি করা অর্থ দিয়ে এই সুপারইয়টটি কেনা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ছবি: রয়টার্স

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৯ সালে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ওয়ানএমডিবি তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাজিব। কিন্তু ২০১৫ সালে ব্যাংক ও বন্ডহোল্ডারদের পাওনা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর এই তহবিল নিয়ে প্রশ্ন শুরু হয়।

আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর তদন্তকারী অন্যতম দেশ যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের পর তারা জানায়, এই তহবিলের সাড়ে চারশ কোটি ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে।   

‘মালয়েশিয়ার এক নম্বর কর্মকর্তা’ বলে অভিহিত এক ব্যক্তি ওয়ানএমডিবি থেকে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার অর্থ গ্রহণ করেছেন বলে জানান মার্কিন তদন্তকারীরা। পরে ওই ‘ব্যক্তি’ নাজিব রাজাক বলে নিশ্চিত হয়।

কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, এসব অর্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রী রোসমাহ মনসুরের বিলাসী জীবনযাপনের পেছনে খরচ করা হয়।

রোসমাহও দুর্নীতির অনেকগুলো অভিযোগের মোকাবিলা করছেন।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নাজিবকে সব ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত বলে ছাড়পত্র দিয়েছিল মালয়েশিয়ার কর্তৃ্পক্ষ।