একদিনের জন্য ব্রেক্সিটের নিয়ন্ত্রণ নিলেন ব্রিটিশ এমপিরা

সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনেরভিত্তিতে ব্রেক্সিট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একদিনের জন্য সরকারের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত সকল পার্লামেন্টারি কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়েছে ব্রিটিশ এমপিরা।

>>রয়টার্স
Published : 26 March 2019, 10:45 AM
Updated : 26 March 2019, 10:45 AM

পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট বিষয়ক আলোচ্যসূচি হাতে নিতে সাংসদদের আনা একটি অভূতপূর্ব সংশোধনী প্রস্তাবে টেরিজা মে-র সরকার ৩২৯-৩০২ ভোটে হেরেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বিভিন্ন দলের সাংসদদের সমর্থনপুষ্ট ওই সংশোধনী অনুযায়ী বুধবার ব্রেক্সিট নিয়ে সিরিজ ভোট হবে; সেখানেই কোন পদ্ধতির বিচ্ছেদে সবচেয়ে বেশি সাংসদের সমর্থন আছে তা জানা যাবে।

সরকারের এ সর্বশেষ পরাজয়ের পরও মে বলছেন, সাংসদদের ইচ্ছাই শেষ পর্যন্ত মানা হবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না তিনি।

কনজারভেটিভ ব্যাকবেঞ্চার স্যার অলিভার লেটউইনসের আনা এ সংশোধনীটিতে বিরোধীদের পাশাপাশি তিন মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন টোরি দলের ৩০ সদস্যও সমর্থন দিয়েছেন।

সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগে অবশ্য ওই তিন মন্ত্রী- রিচার্ড হ্যারিংটন, অ্যালিস্টার বার্ট ও স্টিভ ব্রাইন পদত্যাগ করেন।

এ সময় হ্যারিংটন অভিযোগ করে বলেছেন, মে-র সরকার ব্রিটিশ জনগণের ‘জীবন ও জীবিকা নিয়ে জুয়া খেলছে’।

ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ব্রেক্সিট নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারলেও তা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদন করাতে গিয়ে একের পর এক নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে মে-র সরকারকে।

পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচতে টেরিজা সর্বশেষ ব্রেক্সিটের বিকল্প প্রস্তাবগুলো নিয়ে সিরিজ ভোট আয়োজনেও এমপিদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলোচ্যসূচির নিয়ন্ত্রণ সাংসদদের হাতে গেলে তা ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির’ সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেছিলেন এ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

অন্যদিকে লেটউইনের সংশোধনীতে সমর্থন জানানো এমপিরা বলছেন, ব্রেক্সিটের সবকিছুতে এমপিদের কথা বলার সুযোগ সরকার রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন না।

সংশোধনীটির অন্যতম সমর্থক লেবার পার্টির নেতা জেরমি করবিনের মতে, সরকারকে অবশ্যই এ উদ্বেগের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।

“সরকার ব্যর্থ হয়েছে, আমার বিশ্বাস হাউস অব কমন্স সফল হবে,” বলেছেন তিনি।

ঐক্যমতের ভিত্তিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাংসদরা যে পথ খুঁজবেন, তাতে প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে আরেকটি গণভোটের বিষয়ও থাকবে, আশা করবিনের।

মে অবশ্য শুরু থেকেই এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।

হাউস অব কমন্সে সরকারের সর্বশেষ পরাজয়ে বিভিন্ন দলের নেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

“একজন প্রধানমন্ত্রীর অপমানজনক পরাজয়, যিনি নিজের দল, মন্ত্রিসভা ও পুরো ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার ওপর থেকেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন,” লেটউইনের সংশোধনী প্রস্তাবে সরকারের হারের পর টুইটারে এমনটাই বলেছেন ছায়া ব্রেক্সিটমন্ত্রী কেইর স্টার্মার।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাতে নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় ব্রেক্সিটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ শোনা গেছে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) জোয়ানা টেরির মুখে।

তিনি বলেছেন, “এটা এখন আর কেবল বুধবারেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখন পার্লামেন্টের হাতে আদেশের কাগজগুলোর নিয়ন্ত্রণ। পার্লামেন্ট নিজেদেরকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবারের পর আরও একটি দিন পুরস্কার হিসেবে দিতে পারে, এবং এটা চলতেই থাকবে। আমরা এখন যে ঐক্যমত গঠনের চেষ্টা করছি, তা টেরিজা মে-র তা দুই বছর আগেই করা উচিত ছিল।”

সরকারের এ পরাজয়কে ‘পার্লামেন্টারি ম্যাসাকার’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা সাবেক ব্রেক্সিটমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান।

“এমপিদের মধ্যে বেশিরভাগই যে ব্রেক্সিটের বিরোধী ছিল তা আমরা জানি। তারা (ব্রেক্সিট নিয়ে হওয়া) গণভোটের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন, নন গণভোটের রায় বাস্তবায়নের প্রতিও। তারা ভোটের সিদ্ধান্তটি উল্টে দিতে চান যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য,” বলেছেন তিনি।

বিবিসি বলছে, বুধবার হাউস অব কমন্সে ব্রেক্সিট নিয়ে যে যে বিষয়ের ওপর ভোট হতে পারে, তার মধ্যে আছে- ব্রেক্সিট প্রক্রিয়াকে নমনীয় করা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি কাস্টমস ইউনিয়ন সৃষ্টি কিংবা আরেকটি গণভোট।

যদিও এসব ভোটের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা এবং কীভাবে সেগুলো কার্যকর হবে, তা স্পষ্ট নয়।

মে বলেছেন, তিনি ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় সাংসদদের এ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ‘সন্দিহান’। সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপিরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছালেও, সরকার তা মানবে সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

“এসব ভোট এমন জায়গায় নিয়ে যেতে পারে, যা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মধ্যস্থতা করা সম্ভব হবে না,” বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

ব্রেক্সিট সংকট সমাধানের জন্য মে-কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের চূড়ান্ত সময়সীমা ২৯ মার্চের পর আরও দুই সপ্তাহ অতিরিক্ত সময় দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সে অনুযায়ী, আর্টিকেল ৫০ কার্যকরের সময়সীমা অন্তত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়াতে চলতি সপ্তাহেই পার্লামেন্টে একটি ভোট করতে হবে।

চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে না পারলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনে নিয়েও ঝামেলা বেধে যাবে।

আগামী ২৩ থেকে ২৬ মে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই ভোট হওয়ার কথা।