গোলান মালভূমি ‘ইসরায়েলি ভূখণ্ড’, স্বীকৃতি ট্রাম্পের

মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকা গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2019, 07:48 AM
Updated : 26 March 2019, 08:02 AM

ওয়াশিংটন সফররত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘নির্বাচনে জয়ী হতে সহায়তা করতে’ তিনি এ স্বীকৃতি দেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করেছিল ইসরায়েল। সামরিক কৌশলগভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই মালভূমিটিকে ইসরায়েল ১৯৮১ সালে আইনিভাবে নিজেদের ভূখণ্ডের অর্ন্তভুক্ত করে নিলেও বিশ্ব সম্প্রদায় তা মেনে নেয়নি।

কিন্তু সোমবার হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে ‘গোলান মালভূমি ইসরায়েলি ভূখণ্ড’ এই ঘোষণা দেওয়া স্বীকৃতিপত্রে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। আনুষ্ঠানিক এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গোলান মালভূমির বিষয়ে তাদের কয়েক দশকের অনুসৃত নীতি থেকে সরে গেলো।  

এই স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ট্রাম্পের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার এক টুইটে গোলান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি বদলের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রিপাবলিকান এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর প্রতি প্রত্যক্ষ সমর্থনের ইঙ্গিত দিলেন বলে মন্তব্য রয়টার্সের। পঞ্চম মেয়াদের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নেতানিয়াহু আগামী ৯ এপ্রিল সাধারণ নির্বাচনের মুখোমুখি হচ্ছেন।

রোববার চার দিনের সফরে ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গাজা থেকে ছোড়া রকেটে তেল আবিবের নিকটে সাত জন আহত হওয়ার খবরে সফর সংক্ষিপ্ত করেন।

ঘোষণাটি স্বাক্ষর করার পর ট্রাম্প বলেন, “এই সিদ্ধান্তে আসতে দীর্ঘ সময় লাগলো।”

নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পদক্ষেপকে স্বাগত জানান এবং বলেন, তার চেয়ে ভালো বন্ধু ইসরায়েল আর পায়নি। ইসরায়েলের কেন গোলান ধরে রাখা দরকার এর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি অতীতের দুটি আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রসংগ তোলেন।  

বলেন, “ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে যেমন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল, ১৯৭৩ সালে যেমন দাঁড়িয়েছিল, আজও তেমনি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ওই উচ্চ ভূমিটি ধরে রেখেছি এবং কখনোই ছাড়বো না।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে সিরিয়া দ্রুত তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে তাদের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার ওপর ‘স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে বর্ণনা করে গোলান পুনরুদ্ধারের অধিকার তাদের আছে বলে জানিয়েছে দেশটি।

ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপেও গোলান মালভূমির বিষয়ে জাতিসংঘের অবস্থানে ‘কোনো পরিবর্তন আসবে না’ বলে জানিয়েছে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

১৯৮১ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এর ১৫ সদস্যের সর্বসম্মতিতে গৃহীত এক প্রস্তাবে ঘোষণা করা হয়েছে, “অধিকৃত সিরিয়ার গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি আইন, বিচার ও শাসন ব্যবস্থা জারির সিদ্ধান্ত বিশ্ব সম্প্রদায়ের বৈধ সম্মতি ছাড়া অকার্যকর।”

ইসরায়েলকে তার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে, ঘোষণায় এমন দাবিও করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

যুক্তরাষ্ট্রের নেটো জোট মিত্র তুরস্ক ওয়াশিংটনের এ স্বীকৃতিকে অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করে তারা জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিবে বলে জানিয়েছে।

আরব লীগও যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের নিন্দা করে এটি ‘মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া ও ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে’ বলে এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেছে।

ট্রাম্প গত সপ্তাহে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে টুইট করার পর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), তুরস্ক, মিশর, আরব লীগ ও রাশিয়া।