রাশিয়া-ট্রাম্প আঁতাতের প্রমাণ মেলেনি মুলারের তদন্তে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আঁতাত করেননি বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন এ বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2019, 03:29 AM
Updated : 25 March 2019, 04:43 AM

মুলারের ওই তদন্ত প্রতিবেদনের একটি সারসংক্ষেপ রোববার কংগ্রেসের সামনে উপস্থাপন করেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার।

বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পদকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে এ তদন্ত বাধাগ্রস্ত করেছেন কিনা- সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কোনো উপসংহার টানেননি মুলার। আবার ট্রাম্পের কোনো দায় ছিল না- এমন কথাও সেখানে বলা হয়নি।

ট্রাম্প এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বরাবরের মতই টুইট করে। তিনি লিখেছেন- “কোনো আঁতাত হয়নি, বাধাও দেওয়া হয়নি।” 

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচার শিবিরের সঙ্গে মস্কোর কথিত আঁতাত নিয়ে পরিচালিত এই তদন্তকে বিভিন্ন সময়ে বর্ণনা করে এসেছেন ‘উইচ হান্ট’ হিসেবে।

রোববার প্রতিবেদন প্রকাশের পর ট্রাম্প বলেছেন, ওই তদন্ত ছিল ‘অবৈধ’ এবং তা ‘ব্যর্থ’ হয়েছে।

“আমাদের দেশকে এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, এটা লজ্জার,” বলেছেন ট্রাম্প।

এই তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ২২ মাসের মাথায় মুলার তার প্রতিবেদন জমা দিলেন মার্কিন কংগ্রেসের কাছে। এই সময়ের মধ্যে ট্রাম্পের সাবেক ছয়জন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে বিচারের মুখোমুখি করেছেন তিনি, কয়েকজনকে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে।

মুলার তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অপরাধ করেছেন- এরকম কোনো উপসংহার এই প্রতিবেদন টানছে না। এই প্রতিবেদন তাকে দায়মুক্তিও দিচ্ছে না।”

কেন এই তদন্ত

২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিশ্বকে হতবাক করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নিউ ইয়র্কের ধনকুবের রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত ছিলেন।

ওই নির্বাচনে প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে আসা রাশিয়া কোনোভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল বলে সন্দেহ জোরালো হয়ে ওঠে সে সময়।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও বলা হয়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল রিপাবলিকানদের পক্ষে নিতে রাশিয়া গোপন কোনো ষড়যন্ত্র করেছিল বলে তারা মনে করছে।

বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছিলেন এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান জেমস কোমি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে বরখাস্ত করলে একজন বিশেষ প্রসিকিউটর নিয়োগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। কংগ্রেসে ডেমোক্রেট দলীয় সদস্যদের এই স্বাধীন তদন্তের দাবি ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির কিছু সদস্যেরও সমর্থন পায়।

তখনই এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান রবার্ট মুলারকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেয় মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রচার শিবির ও রাশিয়ার মধ্যে কোনো আঁতাত হয়েছিল কিনা- তা খতিয়ে দেখার ভার দেওয়া হয় তার ওপর।

পাশাপাশি এ বিষয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) তদন্তকে ট্রাম্প বাধাগ্রস্ত করেছিলেন কিনা এবং এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকে ওই তদন্তের কারণেই বরখাস্ত করা হয়েছিল কিনা- তাও খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় মুলারকে।

মুলারের দল গত শুক্রবার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর শনিবার প্রায় নয় ঘণ্টা ধরে তা পড়ে সার সংক্ষেপ তৈরি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। রোববার সেই সার সংক্ষেপ তিনি সংগ্রেসের সামনে উপস্থাপন করেন।

কী আছে প্রতিবেদনে?

প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্তসারে অ্যাটর্নি জেনারেল বার বলেছেন, কোনো মার্কিন নাগরিক বা ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের কোনো সদস্য জেনেশুনে রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত করেছেন- এমন কোনো প্রমাণ বিশেষ কৌঁসুলি পাননি।

রুশ আঁতাতের অভিযোগ নিয়ে এই তদন্ত ট্রাম্প বাধাগ্রস্ত করেছিলেন কি না- সে প্রসঙ্গটি এসেছে উইলিয়াম বারের সংক্ষিপ্তসারের দ্বিতীয় অংশে।

তিনি লিখেছেন, তদন্তকারীরা সাধারণত যেভাবে নিজেদের মতামত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, সেরকম কোনো সিদ্ধান্ত টানতে চাননি বিশেষ কৌঁসুলি মুলার। 

“তদন্তের কাজে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল কি হয়নি- সে প্রসঙ্গে কোনোভাবেই কোনো উপসংহার টানেননি তিনি।”

অ্যাটর্নি জেনারেল কংগ্রেসে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তদন্তে বাধা দিয়েছিলেন কি না- সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার মত যথেষ্ট প্রমাণ তদন্তে পাওয়া যায়নি।

চিঠির শেষে বার জানিয়েছেন, মুলারের প্রতিবেদন থেকে আরও কিছু বিষয় তিনি পরে প্রকাশ করবেন। তবে কিছু বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করতেই হবে।