গোলান: ট্রাম্পের টুইট প্রত্যাখ্যান সিরিয়ার, ইরান-রাশিয়া-তুরস্কের উদ্বেগ

গোলান মালভূমির দখলকৃত অংশে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছে সিরিয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2019, 09:34 AM
Updated : 22 March 2019, 10:57 AM

শুক্রবার এক বিবৃতিতে যে কোনো উপায়ে গোলান পুনরুদ্ধারেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।

১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে গোলানের বেশিরভাগ অংশই তেল আবিবের দখলে চলে যায়। চার বছর পর সিরিয়া সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

ইসরায়েলের দখলে থাকলেও গোলানে তাদের সার্বভৌমত্ব কখনোই আন্তর্জাতিক সমর্থন পায়নি। মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে দূরত্ব বজায় রেখেছিল।

গত বছর তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে আনা ট্রাম্প প্রশাসনই শেষ পর্যন্ত গোলানে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের আন্তর্জাতিক খরা ঘুচানোর ইঙ্গিত দিল।

“আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে উপত্যকাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ,” কয়েক দশকের নীতি বদলে গোলান উপত্যকায় ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন ট্রাম্প।

কয়েক ঘণ্টা পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ অবস্থানের নিন্দা জানায় দামেস্ক। এ অবস্থানের ভেতর দিয়ে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘অন্ধ পক্ষপাতিত্ব’ প্রকাশ পেয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।

“গোলান সিরিয়ার, আরবদের ছিল, থাকবে। এ বাস্তবতার কখনোই পরিবর্তন হবে না। সম্ভাব্য সব উপায়ে গোলানের পবিত্র ভূমিকে স্বাধীন করার ব্যাপারে রাষ্ট্র সিরিয়া আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ,” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা।

ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ‘অবজ্ঞা’ হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়েছে তারা।

গোলানে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে মার্কিনের স্বীকৃতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে তুরস্ক। এ সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংকট উসকে দিতে পারে বলেও সতর্ক করেছে তারা।

“গোলানের দখলদারিত্বকে বৈধতা দেয়ার বিষয়কে অনুমোদন দিতে পারি না আমরা,” মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জোট ওআইসির এক বৈঠকে বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান।

ট্রাম্পের টুইটকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মিত্র ইরানও। সিরিয়ায় তেহরানের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি তেল আবিবের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে বলে গত কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছে ইসরায়েল।

“গোলান যে সিরিয়ারই, এই বাস্তবতা (মার্কিনের) অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য স্বীকৃতিতে বদলাবে না,” ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাশেমীকে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।

গোলানে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে আসাদের আরেক মিত্র রাশিয়াও।

যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের ‘সুস্পষ্ট লংঘন’, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আরআইএ। 

অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন।

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে দৃঢ়ভাবে স্বীকৃতি দিলেন এমন এক সময়ে যখন ইরান সিরিয়াকে ব্যবহার করে ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে চাইছে,” বলেছেন তিনি।

ইসরায়েলে ৯ এপ্রিল হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনের আগে আগে ট্রাম্পের এ ঘোষণা নেতানিয়াহুর পড়তে থাকা জনপ্রিয়তায় লাগাম টানতে পারে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

দশককালের মার্কিন নীতি বদলে ট্রাম্প ২০১৭ সালে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ওই শহরে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেন।

তার ওই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের সংকটকে আরও জটিল করে তোলে। গতি পায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সীমান্ত সংঘর্ষও।

পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখা ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদও জেরুজালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানায়।