১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সিরিয়ার কাছ থেকে এ মালভূমিটির বেশিরভাগ অংশই দখলে নিয়েছিল তেল আবিব। চার বছর পর সিরিয়া হাতছাড়া হওয়া অংশটি পুনর্দখলের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়।
ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গোলানে তাদের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি কখনোই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে দৃশ্যত দূরত্বই বজায় রাখছিল।
গত বছর তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনই শেষ পর্যন্ত দশককালের পররাষ্ট্র নীতি বদলে গোলানে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দিল।
বৃহস্পতিবার এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপত্যকাটি নিয়ে তার সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
“আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে উপত্যকাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছেন তিনি।
১৯৮১ সালে ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে গোলানে তাদের বসতি বিস্তৃত করলেও তাতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি।
ট্রাম্পের এই টুইট প্রত্যাখ্যান করেছে সিরিয়া। ‘যে কোনো মূল্যে’ গোলান পুনরুদ্ধারেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের হয়ে লড়তে আসা ইরানি বাহিনী ও তাদের ‘সামরিক অগ্রগতিতে’ দুশ্চিন্তায় থাকা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে দৃঢ়ভাবে স্বীকৃতি দিলেন এমন এক সময়ে যখন ইরান সিরিয়াকে ব্যবহার করে ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে চাইছে,” বলেছেন তিনি।
ইসরায়েলে ৯ এপ্রিল হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনের আগে আগে ট্রাম্পের এ ঘোষণা নেতানিয়াহুর পড়তে থাকা জনপ্রিয়তায় লাগাম টানতে পারে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
গোলানে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তে হিতে-বিপরীত হতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের।
“যুদ্ধের মাধ্যমে দখল করা ভূখণ্ডের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যে প্রস্তাব আছে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত তা লংঘন করবে,” বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রিচার্ড হাস।
পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক একটি থিঙ্কট্যাঙ্কের এ প্রেসিডেন্ট গোলান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের অবস্থানের সঙ্গে ‘তীব্র দ্বিমত’ও ব্যক্ত করেন।
দশককালের মার্কিন নীতি বদলে ট্রাম্প ২০১৭ সালে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ওই শহরে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেন।
তার ওই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের সংকটকে আরও জটিল করে তোলে। গতি পায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সীমান্ত সংঘর্ষও।
পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখা ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদও জেরুজালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানায়।