নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ।
Published : 15 Mar 2019, 09:41 AM
শুক্রবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য দেন বলে জানায় বিবিসি, নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ড।
বুশ বলেন, ডিন্স এভিনিউর আল নূর মসজিদে ৪১ জন এবং লিনউড এলাকার অন্য মসজিদে সাত জন নিহত হয়েছেন।
“হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজন মারা গেছেন।”
নিহতদের মধে্যে তিনজন বাংলাদেশি।
হামলায় আহত অন্তত ৪৮ জন ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতাল চিকিৎসাধীন আছেন বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আহতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
হাসপাতাল থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে খুব জরুরি না হলে লোকজনকে আহতদের দেখতে হাসপতালে না আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
“এরই মধ্যে দুই শতাধিক মানুষ হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছে।”
মসজিদে হামলার এ ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ এবং ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী অ’ডুর্ন।
তিনি বলেন, “নিশ্চিত ভাবেই পরিকল্পনা করে এ হামলা চালানো হয়েছে।”
হামলার পর শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী অ’ডুর্ন বলেন, “এটা নিউ জিল্যান্ডের অন্ধকারতম দিনগুলোর একটি। এখানে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা পরিষ্কার ভাবেই অস্বাভাবিক এবং অপ্রত্যাশিত নৃশংসতা।”
দুই মসজিদে হামলায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী বলে জানান পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ।
গ্রেপ্তার ২৮ বছরের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে বুশ বলেন, শনিবার তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
হামলায় জড়ি সন্দেহে আটক এক ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তিনি বলেন, সন্দেহভাজন হামলাকারী ‘একজন চরম ডানপন্থি নৃশংস সন্ত্রাসী’।
দুই মসজিদে হামলার পর ক্রাইস্টচার্চ কর্তৃপক্ষ নগরীর সব মসজিদ পরবর্তী নোটিস না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। নগরীর সব স্কুলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়:
প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আল নূর মসজিদে গুলি শুরু হলে তারা প্রাণ বাঁচাতে সেখানে থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। মসজিদের বাইরে রক্তাক্ত অবস্থায় লোকজনকে পড়ে থাকতে দেখার কথাও জানান তারা।
আল নূর মসজিদ এলাকায় মহান ইব্রাহিম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেন, “শুরুতে আমি ভেবেছিলাম বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে এমনটা হচ্ছে। পরে দেখি সবাই দৌড়াতে শুরু করেছে।
“এখনো আমার বন্ধুরা মসজিদের ভেতরে আছে।”
অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হামলাকারী সামরিকবাহিনীর মত পোশাক পরে ছিল। হাতে থাকা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে সে ক্রামগত গুলি ছুড়তে থাকে।
হামলাকারীর হেলমেট ক্যামেরায় গুলির দৃশ্য ‘লাইভ’:
আল নূর মসজিদে হামলাকারী তার হেলমেটে বসানো ক্যামেরায় গুলি চালানোর পুরো দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেছেন।
প্রায় ১৭ মিনিটের ওই লাইভে অটোমেটিক রাইফেলধারী ওই ব্যক্তি নিজের নাম বলেছেন ‘ব্রেন্টন ট্যারেন্ট’। ২৮ বছর বয়সের শেতাঙ্গ ওই হামলাকারীর জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়।
বন্দুকধারী ক্রাইস্টচার্চের ডিন্স এভিনিউতে আল নূর মসজিদের দিকে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় ‘লাইভ’ শুরু হয়। একটি ড্রাইভওয়ের কাছে তিনি গাড়ি পার্ক করেন। গাড়িতে চালকের পাশের আসনে বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং প্রচুর গুলি দেখা যায়। সেখানে পেট্রোল ভর্তি কয়েকটি ক্যানও ছিল।
ওই ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মসজিদের দিকে হাঁটতে শুরু করে বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মসজিদে ঢোকার পথেই সে একজনকে গুলি করে। ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করতে শুরু করে।
সে বেশ কয়েকবার তার সেমি-অটোমেটিক রাইফেলটিতে গুলি ভরে এবং এলোপাতাড়ি গুলি করে।
এভাবে প্রায় তিন মিনিট ধরে গুলি করার পর সে মসজিদের সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। রাস্তায় দিকে যাওয়ার সময় সে আশেপাশের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হামলার ভিডিও সরিয়ে নিতে কাজ করছে কেন্টার্বুরি পুলিশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে ওই ভিডিও শেয়ার না করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, “ক্রাইস্টচার্চে হামলার ঘটনার চরম বিপর্যয়কর ভিডিওগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে পুলিশ সচেতন এবং সেগুলো সরিয়ে নিতে কাজ করছে।”
ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ বন্দুকধারীর ফেইসবুক ও ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট সরিয়ে ফেরার কথা জানিয়েছে। টুইটার থেকেও ওই ব্যক্তির একাউন্ট মুছে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ক্রিকেট দল নিরাপদঃ
নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ডের খবরে বলা হয়েছে, গোলাগুলি শুরুর পরপরই আল নূর মসজিদে পৌঁছেছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। তারা দ্রুত সেখান থেকে সরে যান।
শনিবার ক্রাইস্টচার্চে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্ট খেলতে মাঠে নামার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। হামলার পর ওই ম্যাচটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।