ইথিওপিয়ায় বিমান দুর্ঘটনার পর প্রশ্নের মুখে বোয়িং

ইথিপিয়ান এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে আরোহী ১৫৭ জনের সবাই নিহত হওয়ার পর প্রশ্নের মুখে পড়েছে মার্কিন বিমান নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2019, 04:57 AM
Updated : 11 March 2019, 05:26 AM

গত অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের একই ধরনের আরেকটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে সব আরোহী নিহত হয়েছিল। এ নিয়ে বোয়িংয়ের নতুন সংস্করণের এই উড়োজাহাজটি পাঁচ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার বিধ্বস্ত হল। 

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটির মতো লায়ন এয়ারের ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ উড়োজাহাজটিও উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়ে ১৮৯ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছিলেন, জানিয়েছে বিবিসি।

এই পরিস্থিতিতে সোমবার চীনের বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা চীনের এয়ারলাইন্সগুলোকে তাদের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ উড়োজাহাজের ফ্লাইট স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

ইথিপিয়ার উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের ছয় মিনিট পর আর লায়ন এয়ারের উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে উড়তে সক্ষম বোয়িং কোম্পানির সরু দেহের এই জেটবিমানটি ২০১৭ সাল থেকে যাত্রী পরিবহন করতে শুরু করে।

লায়ন এয়ারের উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর তদন্তকারীরা জানিয়েছিল, উড়োজাহাজকে সচল রাখতে ৭৩৭ ম্যাক্সে সংযোজিত নতুন একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির (অ্যান্টি-স্টলিং সিস্টেম) সঙ্গে পাইলট সংগ্রাম করছিলেন বলে মনে হয়েছে।

তদন্তে যেসব তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি যেন স্থবির হয়ে না পড়ে তার নকশা করে সংযোজিত এই পদ্ধতিটি উড়োজাহাজের নাকটিকে বারবার নিচের দিকে নামিয়ে দিচ্ছিল, যদিও পাইলট তা ঠিক রাখার চেষ্টা করছিলেন।

দুর্ঘটনায় পড়া এই দুটি উড়োজাহাজই নতুন ছিল এবং উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই এগুলো বিধ্বস্ত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগের সাবেক মহাপরিদর্শক ম্যারি স্কিয়াভো সিএনএনকে বলেন, “এটি অত্যন্ত সন্দেহজনক। নতুন একটি মডেলের উড়োজাহাজ এক বছরে দুইবার বিধ্বস্ত হলো। বিমান পরিবহন শিল্পে এটি সতর্ক সংকেত বাজিয়ে দিয়েছে, কারণ এমনটি ঘটে না।” 

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের এ ঘটনার তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় অ্যান্টি-স্টলিং সিস্টেম দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কি না তা এখনো পরিষ্কার হয়নি। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অন্যান্য টেকনিক্যাল ইস্যু ও মানবিক ভুলের বিষয়টিও গণ্য করতে হবে। 

ইথিওপিয়ান এয়ালাইন্সের নিরাপত্তা রেকর্ড ভাল। শুধু ২০১০ সালে বৈরুত থেকে উড্ডয়নের পর তাদের একটি উড়োজাহাজ ভূমধ্যসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছিল।

তবে কী কারণে ইথিওপিয়ার এই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে তা নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত করা না গেলেও চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল প্রশাসন (সিএএসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে তারা বোয়িং ও মার্কিন ফেডারেল বিমান পরিবহন প্রশাসনের (এফএএ) সঙ্গে কথা বলার পর এয়ারলাইন্সগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ দিবে।  

সিএএসি বলেছে, “দুটি দুর্ঘটনাতেই নতুন সরবরাহ করা বোয়িং ৭৩৭-৮ উড়োজাহাজ জড়িয়ে আছে এবং উড্ডয়নের পরপরই ঘটনা দুটি ঘটেছে, কয়েকটি ক্ষেত্রেই দুটি ঘটনার মধ্যে মিল আছে।”

চীনা এয়ারলাইন্সগুলো ৯৬টি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে কেইম্যান আইল্যান্ড এয়ারলাইন জানিয়েছে, আরও তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত কেইম্যান এয়ারওয়েজ তাদের নতুন দুটি ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করবে না।

এছাড়া সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে ফিজি এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স লিমিটেড ও ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ।