লক্ষ্ণৌতে দুই কাশ্মীরি ফল বিক্রেতাকে মারধর, গ্রেপ্তার ৪

উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে দুই কাশ্মীরি ফল বিক্রেতাকে মারধরের ঘটনায় ভারতের পুলিশ কট্টর ডানপন্থি সংগঠন বিশ্ব হিন্দু দলের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2019, 10:48 AM
Updated : 7 March 2019, 10:48 AM

বুধবার স্থানীয় সময় বিকালে লক্ষ্ণৌর দালিগঞ্জে এ হামলার ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। 

গেরুয়া বসনধারী হামলাকারীরা সেসময় কাশ্মীরি দুই ফল বিক্রেতাকে ‘সন্ত্রাসী’ অ্যাখ্যা দেয় এবং তাদের পরিচয়পত্রও দেখতে চায়।

গত মাসে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদের আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলার পর থেকেই ভারতজুড়ে কাশ্মীরিদের ওপর একের পর এক হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

দেশটির সুপ্রিম কোর্ট পরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোকে এ ধরনের ঘটনা প্রতিহত ও কাশ্মীরিদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।   

লক্ষ্ণৌতে হামলার ঘটনার দুটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এর একটিতে দেখা গেছে, কাশ্মীরি দুই হকার তাদের কাছে থাকা ফলগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে রাস্তার পাশে বসেছিলেন । হঠাৎই গেরুয়া পোশাক পরা একদল যুবক লাঠিহাতে তাদের ওপর হামলে পড়ে। 

হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে দুই হকার তাদের মাথা ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন। তারা যুবকদের হামলা থামাতে অনুরোধ করলেও তাতে কাজ হয়নি। 

বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা ফল নিয়ে পালিয়ে যেতে উদ্যত এক হকারের কাছ থেকে হামলাকারীরা তার জাতীয় পরিচয়পত্রও চায় বলে অন্য এক ভিডিওতে দেখা গেছে। কাশ্মীরি বলেই এদের মারা হচ্ছে, ভিডিওতে এক হামলাকারীকে এমনটাও বলতে শোনা গেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

স্থানীয়রা পরে মোহাম্মদ আফজাল নায়েক ও আবদুল সালাম নামে ওই দুই ফল বিক্রেতাকে উদ্ধার করেন।

“ওই লোকেরা হুট করেই হাজির হয়েছিল। তারা আমাদের সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে ও মারতে শুরু করে। আমরা ২০ বছর হয় এখানে এসেছি। এরকমটা আগে কখনোই হয়নি,” বলেছেন হামলার শিকার এক কাশ্মীরি ফল বিক্রেতা।

মারধরের ওই ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর লক্ষ্ণৌ পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

“হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা সবাই কট্টর ডানপন্থি বিশ্ব হিন্দু দলের সদস্য। এদের একজনের নাম হিমানশু আওয়াস্তি, সে নিজেকে দলের সভাপতি দাবি করেছে,” বলেছেন এক কর্মকর্তা।

হিমানশু নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টেই হামলার ভিডিওটি পোস্ট করে। ভিডিওটি পরে সরিয়ে নেওয়া হয়।

“আমরা এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়াই চালাবো। কেউই আইনের উর্ধ্বে নয় এবং কেউই সাধারণ নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে না। যারা সাধারণ কাশ্মীরিদের টার্গেট বানাবে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে,” বলেছেন লক্ষ্ণৌ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আনন্দ কুমার।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দুই প্রভাবশালী রাজনীতিক ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আব্দুল্লাহ টুইটারে এ ঘটনা সম্পর্কে একটি পোস্ট দিয়ে তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ট্যাগও করেছেন।

কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির পাশাপাশি অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের আসাদ উদ্দিন ওয়াইজিও এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।