ভারতে বিরোধীদলগুলোর সমালোচনার ঝড়ে মোদী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ভোটের লড়াইয়ে জিততে চেয়েছিলেন বলে বিরোধীদলগুলোর কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

>>রয়টার্স
Published : 6 March 2019, 03:30 PM
Updated : 6 March 2019, 05:33 PM

নির্বাচনী লাভের জন্য পরিণতির কথা না ভেবে মোদী যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সঙ্কটকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছেন, সরকারের ব্যর্থতা থেকে জনগণের নজর সরাতে চেয়েছেন- এমন নানা অভিযোগ তুলেছে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতশাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি দল জইশ-ই-মোহাম্মদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জওয়ান নিহতের প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে আড়াই থেকে তিনশ জঙ্গিকে হত্যা করার দাবি করে।

প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণাত্মক এ জবাবকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারা। সে সময়ের জনমত জরিপগুলোও এ বিমান অভিযানের পর মোদীর জনপ্রিয়তা বাড়ার কথা বলেছিল। এমনকি বিরোধীজোটও মোদীর প্রশংসা করেছিল।

কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের পাল্টা জবাবে শুরু হওয়া আকাশ লড়াইয়ে ভারতের একটি মিগ-২১ জঙ্গিবিমান আজাদকাশ্মীরে ভূপাতিত হয়ে এর পাইলট অভিনন্দন বর্তমান ধরা পড়ার পরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পরদিনই অভিনন্দনকে ভারতে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়ে সব আলো নিজেদের দিকে নিয়ে নেন।

অভিনন্দন ভারতে ফেরায় কাশ্মীর সীমান্তে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমন হয়েছে। কিন্তু বিপাকে পড়েছেন মোদী। পাকিস্তান শুরু থেকেই বলে আসছিল, ভারতীয় বিমান হামলায় কোনো জঙ্গি নিহত হয়নি এবং ভারতীয় জঙ্গিবিমান ভুল জায়গায় বোমা ফেলে পালিয়ে গেছে। এখন ভারতের বিরোধী দলগুলোও একই কথা বলছে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের এক টুইটে পোস্ট করা ভিডিওতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম হামলায় ঠিক কতজন নিহত হয়েছে তা জানতে চান।

এরপর থেকে প্রতিদিনই বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে জানিয়ে তৃণমূলের এক এমপি বলেছেন, “আমরা যে কৌশল গ্রহণ করেছি তাতে প্রথমে তাদের মুখোশ খুলে দেব এবং বাস্তবে যা ঘটেছিল সেটা বের করে আনব। দ্বিতীয়ত, আমরা দেখিয়ে দেব শুধুমাত্র নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহারের জন্য তারা এটা করেছে।”

ওদিকে, কংগ্রেস পার্টি বলছে, ‘পাকিস্তানকে এক হাত নিতে ভারতের মোদীর মত নেতা প্রয়োজন’ বিজেপি’র এ বক্তব্যের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ২০ টির বেশি বিরোধীদলের বেশিরভাগই। কংগ্রেস মুখপাত্র সঞ্জয় ঝা বলেন, “আমরা যা বুঝেছি তাতে মনে হচ্ছে, সরকার তাদের ব্যর্থতা থেকে জনগণের নজর সরাতে চেয়েছিল। কারণ, তারা মাত্রই তিনটি বিধানসভা নির্বাচনে হার দেখেছে এবং পরিস্থিতি সরকারের বিরুদ্ধে।”

জরিপ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মঘাতী হামলার প্রতিশোধে ভারতের আগ্রাসী জবাব মোদী এবং বিজেপি’কে ভোটারদের সমর্থন এনে দিতেও পারে। তবে সমস্যা দেখা দিতে পারে তখনই যদি সরকার বালাকোটে হামলায় ‘বহু জঙ্গি মারা পড়া’র যে দাবি করেছে তা সত্য না হয়।

এরই মধ্যে এমন সব আলামত আসতে শুরু করেছে যাতে ভারত সরকারের এ দাবি ঠিক নয় বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

পাকিস্তানের বালাকোটের কাছে জইশ-ই-মোহাম্মদের যে প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলার দাবি করেছে ভারত, উচ্চ রেজ্যুলেশনের স্যাটেলাইটে তোলা সেখানকার কিছু ছবি বলছে সেখানে জইশ পরিচালিত মাদ্রাসা ভবনগুলো এখনও অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। আবার ভারত সরকারও তাদের দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ এখনো দেয়নি।

কংগ্রেস পার্টির মুখপাত্র ঝা বলেন, তারা বিজেপি’র ব্যর্থতার কথা চাউর করে দেবেন। তাদের অভিযানে আনুষাঙ্গিক যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেসবসহ কাশ্মীরকে মারাত্মক সংকটে ফেলে মোদী যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন তার সবেরই প্রকাশ ঘটাবেন তারা।