শামীমাকে নিয়ে ‘হল্যান্ডে’ ফিরতে চান আইএসযোদ্ধা স্বামী

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে ১৫ বছর বয়সে লন্ডনছাড়া শামীমা বেগমকে নিয়েই নেদারল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তার স্বামী ইয়াগো রিদাইক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2019, 10:35 AM
Updated : 3 March 2019, 10:36 AM

২৭ বছর বয়সী এ ডাচ আইএসযোদ্ধা বর্তমানে উত্তরপূর্ব সিরিয়ায় কুর্দিদের একটি আটক কেন্দ্রে বন্দি আছেন।

চার বছর আগে শামীমা সিরিয়ায় আইএসের অধিকৃত অঞ্চলে পৌঁছানোর কয়েকদিন পরই তাদের বিয়ে হয়। কয়েক মাস আগে এ দম্পতির একটি ছেলেও হয়েছে।

বিবিসির সঙ্গে কথোপকথনে রিদাইক আইএসের হয়ে লড়াইয়ের কথা স্বীকার করেছেন। স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে নেদারল্যান্ডসে ফিরতে চাওয়ার আকুতিও প্রকাশ পেয়েছে তার কণ্ঠে। জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার অপরাধে দেশে ফিরলেই তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

“আমাদের হল্যান্ডেই (নেদারল্যান্ডসে) থাকা উচিত,” বলেছেন তিনি।

আইএসে যোগ দিলেও পরে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন বলে সাক্ষাৎকারে দাবি করেন নেদারল্যান্ডসের আর্নেমের এ বাসিন্দা।

ওই অপরাধে তাকে রাকায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল এবং ডাচ গুপ্তচর অভিহিত করে অবর্ণনীয় নির্যাতনও চালানো হয়েছিল, দাবি রিদাইকের। 

পরে পূর্ব সিরিয়ায় আইএসের শেষ ঘাঁটি বাঘুজ শহর থেকে স্বামীকে নিয়ে পালিয়ে যান ১৯ বছর বয়সী শামীমা।

রিদাইক শেষ পর্যন্ত সিরীয় যোদ্ধাদের একটি দলের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আরও ৩৯ হাজার লোকসহ শামীমা ও তার সদ্য জন্ম নেওয়া ছেলে জারার স্থান হয় উত্তর সিরিয়ার আল-হাল শরণার্থী শিবিরে।

জঙ্গিরা মেরে ফেলার হুমকি দেয়ায় গত সপ্তাহে সেখান থেকেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ ব্রিটিশ নারী সন্তানসহ পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

রিদাইক জানান, বিয়ের সময় তার বয়স ২৩ ও শামীমার ১৫ থাকলেও তাতে অন্যায় দেখছেন না তিনি। শামীমার পছন্দেই বিয়েটি হয়েছে বলেও ভাষ্য তার।

পূর্ব লন্ডনের স্কুল শিক্ষার্থী শামীমার সঙ্গে রাকার একটি নারীশিবিরে দেখা হওয়ার বিষয়েও রিদাইক বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত বলেন। জানান, প্রথম দিকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীকে বিয়ে করায় তার আপত্তির কথাও।

“সত্যি কথা বলতে, যখন আমার এক বন্ধু আমাকে জানায়, একটি মেয়ে আছে যে বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী, আমি তার বয়সের কথা ভেবেই তাতে আগ্রহ দেখাইনি, যদিও পরে আমি ওই প্রস্তাব মেনে নিই,” বলেছেন তিনি।

বিয়ের সময় শামীমার ‘মানসিক অবস্থা উপযুক্ত’ ছিল বলেও জানান এ আইএসযোদ্ধা।

“তার পছন্দেই এটা হয়েছিল। সে একজন জীবনসঙ্গী খুঁজছিল এবং আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তার বয়স কম ছিল, ভালো হত যদি সে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করত। যদিও সে তা করেনি। সে বিয়ে করতে চেয়েছিল আর আমি তাকে বেছে নিয়েছিলাম,” বলেন রিদাইক।

চার বছর আগে লন্ডনছাড়া শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য। শামীমার মা বাংলাদেশী নাগরিক, সেই সূত্রে শামীমাও বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করেছিল যুক্তরাজ্য। 

কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই দাবি অগ্রাহ্য করে বলেছে, শামীমা বাংলাদেশী নাগরিক না হওয়ায় তাকে বাংলাদেশে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে না।

শামীমার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার যুক্তরাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনী লড়াই চালানো হবে বলে ফেব্রুয়ারিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদকে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। 

এক চিঠিতে তারা বলেছেন, পরিবারের সদস্যরা শামীমাকে ‘ত্যাজ্য করতে পারে না’। পরিবারের সদস্যরা শামীমার সন্তানকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসতে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতাও চেয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা জেরমি করবিন বলেছেন, শামীমার ‘ব্রিটেনে ফিরে আসার অধিকার রয়েছে’। আইএসে যোগ দিতে দেশ ছেড়ে যাওয়া এ নারীর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।

অন্যদিকে সন্ত্রাসী তালিকায় নাম থাকলেও নেদারল্যান্ড রিদাইকের নাগরিকত্ব বাতিল করেনি। ডাচ শহরতলীতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এ যুবক ২০১৪ সালে আইএসে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছিলেন।