ট্রাম্প-কিমের ডিনারের সংবাদ সংগ্রহে ৪ সাংবাদিককে বাধা

ভিয়েতনামে দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের নৈশভোজের সংবাদ সংগ্রহে চার সাংবাদিককে বাধা দিয়েছে হোয়াইট হাউস।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2019, 08:15 AM
Updated : 28 Feb 2019, 08:16 AM

বার্তা সংস্থা রয়টার্স, দ্য এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), ব্লুমবার্গ ও দ্য লস এঞ্জেলস টাইমসের ওই চার সাংবাদিক হোয়াইট হাউসের প্রেস পুলের সদস্য ছিলেন। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সব ধরনের সফরের তথ্য সংগ্রহের অধিকার রাখেন।

ডিনারের সংবাদ সংগ্রহে বাধা পাওয়ার আগে মঙ্গলবার রয়টার্স ও এপির দুই সাংবাদিক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কিমের সঙ্গে  মুখোমুখি বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন।

প্রেস পুলের সদস্যরা প্রায়ই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গে থাকা অন্য নেতাদের উদ্দেশ্যে জোরে জোরে প্রশ্ন ছুড়ে দেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

বুধবারও তারা দুই দফা ‘পুল স্প্রে’-তে ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া শীর্ষ সম্মেলন এবং মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনের সাক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন।

শীর্ষ সম্মেলন বা বৈঠকের বিভিন্ন পর্যায়ে ছবি তোলার সময়ই ‘পুল স্প্রে’ নামে পরিচিত।

চার সাংবাদিককে পরে ট্রাম্প-কিমের ডিনার কভারে বাধা দেওয়া হয়।

“আগের দফা পুল স্প্রেগুলোতে জোরে প্রশ্ন করায় যে সংবেদনশীল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে,” তার কারণেই এ বাধা দেওয়া হয়েছে বলে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্সের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

ট্রাম্প-কিমের প্রথম সাক্ষাৎ এবং হাত মেলানোর সময় হোয়াইট হাউসের প্রেস পুলের সফরকারী দলের সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। ওই সময়ে রয়টার্সের সাংবাদিক জেফ ম্যাসন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে সম্মেলনে কী অর্জন করতে চান এবং উত্তর কোরিয়ার নিরস্ত্রীকরণ দাবি থেকে তিনি পিছিয়ে আসছেন কি না তা জানতে চান।

দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প ‘না’ বলেন; প্রথম প্রশ্নের বিস্তৃত উত্তর দেন।

এরপর এপির সাংবাদিক জনাথন ল্যামির প্রেসিডেন্টের কাছে কোরীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির ঘোষণা আসবে কি না, তা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, “আমরা দেখছি।”

প্রতিবেদকদের এরপর বৈঠক কক্ষ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু সময় পর আবারও তাদের দুই নেতাকে প্রশ্ন করার সুযোগ এলে ‘পুল স্প্রে’-র একেবারে শেষ পর্যায়ে ল্যামির ট্রাম্পকে তার সাবেক আইনজীবী কোহেনের সাক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ‘মাথা নেড়ে, মুখ বিকৃত করে অঙ্গভঙ্গি’ করলেও এর কোনো জবাব দেন নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

কংগ্রেসে দেওয়া সাক্ষ্যে কোহেন ট্রাম্পকে ‘বর্ণবাদী, দুষ্ট ও প্রতারক’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিকরা স্যান্ডার্সের সঙ্গে ফিরে যাওয়ার পথেই হোয়াইট হাউসের এ মুখপাত্র ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নে উদ্বেগ জানিয়ে তৃতীয় দফা ‘পুল স্প্রে’ কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কিছু আলোকচিত্রীর জন্য সীমিত করা হয়েছে বলে জানান।

সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ জানান এবং ডিনারের ওই সময়ে সেখানে সংবাদ সংগ্রহে টেলিভিশনের প্রতিবেদকদের সঙ্গে অন্তত একজন করে রেডিও ও পত্রিকার সাংবাদিককে ‘সীমিত পুলে’ অন্তর্ভুক্ত করার চাপ দেন।

হোয়াইট হাউস পরে যাদেরকে ডিনারটি কভারের সুযোগ দেয় সেখান থেকে ম্যাসন, ল্যামির, ব্লুমবার্গের জাস্টিন সিঙ্ক ও লস এঞ্জেলস টাইমসের এলি স্টকলস বাদ পড়েন।

পরে এক লিখিত বিবৃতিতে স্যান্ডার্স জানান, “বৈঠকটির সংবেদনশীলতার মাত্রা বিবেচনা করে আমরা ডিনারের সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকের সংখ্যা ছোট করে এনেছি। আলোকচিত্রী, টেলিভিশন, রেডিও ও পত্রিকার প্রতিনিধি যেন ওই পুলে থাকে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক এ বৈঠকে ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, মার্কিন গণমাধ্যমকে যতখানি সম্ভব প্রবেশাধিকারের সুযোগ নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি আমরা।”

রয়টার্স এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ডিনারের সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ থেকে ম্যাসন ও অন্য সাংবাদিকের বাদ পড়ায় তারা ‘খুবই বিরক্ত’ হয়েছে।

“জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করা এবং তাদের কাছে প্রবেশাধিকারের সুযোগ করে দেওয়াকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করি আমরা,” বলেছে রয়টার্স।

অ্যাসোসিয়েটেডে প্রেসও (এপি) সাংবাদিকদের বাধা দেয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে।

“যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মান বজায় রাখা যে কোনো প্রেসিডেন্টের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, কেবল দেশেই নয়, বিদেশের ক্ষেত্রেও এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছেন এপির মুখপাত্র লরেন এস্টন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানার যে অধিকার মার্কিন জনগণের রয়েছে তা পূরণের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বাধা দেয়ার ঘটনা হোয়াইট হাউসের ‘আরেকটি বাজে নজির’, বলেছেন লস এঞ্জেলস টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক নর্মান পার্লস্টাইন।