আইএস যোদ্ধাদের ‘চিকিৎসক’ আনোয়ার মিয়া এখন ব্রিটেনে ফিরতে চান

ইসলামিক স্টেটের জিহাদীদের চার বছর চিকিৎসা দিয়ে এখন সিরিয়ায় বন্দি জীবনে থাকা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ফার্মাসিস্ট মোহাম্মদ আনোয়ার মিয়া এখন যে কোনো শর্তে যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2019, 06:03 AM
Updated : 27 Feb 2019, 11:56 AM

ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৪০ বছর বয়সী আনোয়ার বলেছেন, সিরীয় স্ত্রী আর দুই সন্তানকেও ব্রিটেনে নিয়ে যেতে চান তিনি।   

সিরিয়ায় শরণার্থী শিবিরে থাকা শামীমা বেগম নামের আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কিশোরী সম্প্রতি তার সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যিনি ২০১৫ সালে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য।

কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার তার আবেদনে সাড়া না দিয়ে উল্টো তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার নোটিস পাঠিয়েছে।

আনোয়ার ২০১৪ সালে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্য ছাড়ার আগে থাকতেন বার্মিংহামে। ভুয়া কর্মীর নাম সৃষ্টি করে বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করে বাড়তি টাকা আয়ের অভিযোগে তার আগের বছর তার ফার্মাসিস্ট লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

সিরিয়া গিয়ে ইসলামিক স্টেটের কথিত খিলাফতে আনোয়ারের নতুন নাম হয় আবু ওবাইদা আল-ব্রিটানিয়া। তিনি বলছেন, আইএসের অধীনে মায়াদিন শহরে তিনি চারবছর অর্থোপেডিক সার্জন হিসেবে কাজ করেছেন। এ বিষয়ে ডিগ্রি না থাকলেও বই পড়ে তিনি ডাক্তারি শিখেছেন।

ছবি: ডেইলি মেইল

আনোয়ার দাবি করেছেন, তিনি কখনোই আইএস এর অনুগত ছিলেন না, তিনি অবৈধভাবে সিরিয়া গিয়েছিলেন ‘মানবিক কারণে’। 

ডেইলি মেইল লিখেছে, গত অগাস্টে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আর নয় মাসের মেয়েকে নিয়ে একটি মোটরবাইকে করে মায়াদিন থেকে পালানোর সময় ইরাক সীমান্তের কাছে কুর্দি বাহিনীর হাতে আটক হন আনোয়ার।

পরে সিরীয় বাহিনী তার স্ত্রী ও মেয়েকে সরিয়ে নিলে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান আনোয়ার। ফলে দ্বিতীয় সন্তানকে কখনও তিনি দেখেননি।

আনোয়ার জানেন না তার স্ত্রী সন্তানরা এখন কোথায় আছে। কিন্তু তার দাবি, তার সন্তানরা বাবার সূত্রে ব্রিটিশ নাগরিক, তাদের নিয়ে তিনি ব্রিটেনে ফিরে যেতে চান। 

“আমি বাড়ি ফিরতে চাই। আমি একজন গর্বিত ব্রিটিশ নাগরিক। ব্রিটেন মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেয়, এটা খুবই ভালো।”  

ডেইলি মেইলকে আনোয়ার বলেছেন, তিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ব্রিটেনে ফিরে যেতে চান, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চান। 

“যদি তারা আমার স্ত্রীকে হেলথকেয়ার সুবিধা দিতে রাজি নাও হয়, কেবল থাকার অনুমতি দিলেই আমি খুশি। আমি আমার জীবনে কখনও কোনো সুবিধা চাইনি। আমি কাজ করে খেয়েছি, নিয়মিত কর দিয়েছি।”

আনোয়ার বলেন, সকল ব্রিটিশ নাগরিককে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব।

কখনও কোনো অপরাধে জড়াননি দাবি করে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আমি পাবলিকের জন্য হুমকি নই। কিন্তু তারা যদি আমাকে নিয়ে ভয় পায়, পুনর্বাসন কেন্দ্রে যেতেও আমার আপত্তি নেই। তারা যদি আমাকে শাস্তি দিতে চায়, তাতেও আমি রাজি। তারা যদি বলে যে আমাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, তাতেও আমি রাজি।”

সিরিয়ায় যাওয়ার জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে আনোয়ার বলেছেন, সময়মত ফেরার সুযোগ থাকলে তিনি আর সিরিয়া যেতেন না।    

ডেইলি মেইল লিখেছে, শামীমা বেগমের মত আনোয়ার মিয়াও জন্মেছেন ব্রিটেনে, তবে তার মা জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি।

আনোয়ার বলেছেন, তিনি কেবল ব্রিটেনেরই নাগরিক, বাংলাদেশি কোনো পাসপোর্ট তার কাছে নেই। 

“আমি জীবনে দুই কি তিনবার বাংলাদেশে গেছি। বাংলাদেশে পাঠানোর বদলে আমি বরং জেলখানায় থাকতে রাজি।”

মাকে তিন সপ্তাহের জন্য বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ২০১৪ সালে নিরুদ্দেশ হন আনোয়ার মিয়া। এরপর আর মায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি। 

ওই বছর সেপ্টেম্বরে তুরস্ক হয়ে তিনি সিরিয়ায় পৌঁছান। আরবি বলতে না পারলেও মায়াদিনে এক হাসপাতালে প্রায় চার বছর কাজ করার কথা বলেছেন তিনি।

যে সময়টায় তিনি সেখানে ছিলেন, তখন সেখানে বহু লোকের শিরোশ্ছেদ করেছে আইএস। তবে সেসব ঘটনা জানেন না বলে দাবি করেছেন আনোয়ার।

২০১৭ সালে ওই হাসপাতালে এক সিরীয় কিশোরীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাকে বিয়ে করেন আনোয়ার।

তুলে আনা মেয়েদের ‘বিয়ে করা’ অথবা যৌনদাসী বানিয়ে রাখা আইএস সদস্যদের মধ্যে ছিল একটি নিয়মিত ঘটনা। তবে আনোয়ারের দাবি, তার স্ত্রীর সঙ্গে আইএস এর কোনো সম্পর্ক নেই। একজন ভালো মনে মানুষ বলেই তিনি তাকে বিয়ে করেছেন।