ভেনেজুয়েলা সংকট: পরিবার নিয়ে শঙ্কায় দলত্যাগী সেনারা

ভেনেজুয়েলায় বিদেশি ত্রাণ আনা নিয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনায় প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর পক্ষ ত্যাগ করে সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে গেছে শতাধিক সেনা। মাদুরো সরকারের অধীনে এখন পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাদের অনেকেই।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2019, 03:49 PM
Updated : 25 Feb 2019, 03:49 PM

যদিও সেনাবাহিনী ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে বলে মত দিয়েছেন তারা। শনিবার কলম্বিয়ায় অবস্থান করা কয়েকজন দলত্যাগী সেনা বিবিসি’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তাদের পরিবার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

২৩ বছরের এক সেনা বিবিসি’র সাংবাদিক ওরলা গুয়েরিন কে বলেন, “প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর অনুগত সেনাবাহিনী হয়ত ‘আমার পরিবারের উপর হামলে পড়বে। এ আশঙ্কার পরও আমি পালিয়ে এসেছি এবং আমার বিশ্বাস এটি আমার সেরা সিদ্ধান্ত ছিল।”

শনিবার ত্রাণ নিয়ে ভেনেজুয়েলা সীমান্তে তুমুল সংঘর্ষের পর বেশিরভাগ সেনা দলত্যাগ করেছে এবং এ সংখ্যা ১শ’র বেশি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

প্রেসিডেন্ট মাদুরো ব্রাজিল এবং কলম্বিয়া সীমান্ত দিয়ে ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করতে সেনা পাঠানোয় পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত হয়ে আছে।সীমান্তের বিভিন্ন ক্রসিং পয়েন্টে ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের নিবৃত্ত করছে।

 ভেনেজুয়েলার স্বঘোষিত অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ও বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুইদো ও তার সমর্থকরা অর্তনৈতিক সংকটে থাকা জনগণের জন্য বিদেশি ত্রাণ আনতে চাইছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মাদুরো এ ত্রাণ দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে দাবি করে তা আটকাতে চাইছেন।

দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভেনেজুয়েলার জনগণের মনে সরকার বিরোধী ক্ষোভ দানা বাঁধার মধ্যেই গত মাসে বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুইদো নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণার পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরম রূপ ধারণ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং লাতিন আমেরিকার প্রতিবেশী বেশিরভাগ দেশ গুইদোকে সমর্থন দিলেও রাশিয়া ও চীনের সমর্থন মাদুরোর দিকে।

ক্ষমতায় থাকতে বদ্ধপরিকর মাদুরো বিক্ষোভ দমন করছেন। এ পরিস্থিতিতে বিরোধীদলের নেতৃত্বে ভেনেজুয়েলায় বিদেশি বিশেষ করে মার্কিন দাতা সংস্থা ত্রাণ পাঠানোর চেষ্টা করছে। তা রুখতেই শনিবার মাদুরোর অনুগত সেনারা অগ্রসর হলে স্থানীয়রা তাদেরকে বাধা দেওয়ায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এ হট্টগোলের মধ্যে সেনারাও পক্ষত্যাগ করে পালিয়ে যায় ব্রাজিল এবং কলম্বিয়ায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা বলেন, “সেনাবাহিনীতে আরও অনেক সেনা দল ত্যাগ করতে চাইছে। কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে পুরো সেনাবাহিনী ভেঙে পড়েছে। আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমরা আর দাস হয়ে থাকতে পারছি না, তাই নিজেরাই নিজেদের মুক্ত করছি।”

আরেক নারী সেনা শনিবারের পরিস্থিতির বর্ণনায় বলেন, “দারুণ উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল, আমি আমার নিজেদের জনগণের ক্ষতি করতে পারব না।

“আমার মেয়ে এখনো ভেনেজুয়েলায় আছে, এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দিচ্ছে। যদিও তার জন্যই আমি একাজ করেছি। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন ছিল, আমি জানি না তারা আমার মেয়ের সঙ্গে কী করবে।”

অন্য একজন বলেন, মানবিক ত্রাণের জন্য সড়কে জনগণকে লড়াই করতে দেখে তিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। “আমার নিজেকে অক্ষম এবং অথর্ব মনে হচ্ছিল। চারপাশে যা ঘটছিল তা দেখে আমার খুব কষ্ট হয়েছে।”

শনিবার কলম্বিয়ার ‍কুকুতা শহর থেকে কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক ভেনেজুয়েলা রওয়ানা হয়। যেগুলোর একটিতে গুইদো নিজেই ছিলেন।

বিরোধীদলের আশা ছিল সেনারা হয়ত ত্রাণ ফিরিয়ে দিবে না। কিন্তু ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল গার্ডের সেনারা সীমান্তে লাইন দিয়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে এবং ত্রাণবাহী গাড়িবহরের দিকে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

উরেনা সীমান্তে সেনাদের কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের পর দুটি ত্রাণবাহী ট্রাকে আগুন ধরে যায় বলে জানিয়েছিল বিবিসি। এরআগের দিন ব্রাজিল সীমান্ত দিয়ে ত্রাণ ঢোকা নিয়ে বিরোধের জেরে সীমান্তের কাছে সেনাবাহিনীর গুলিতে ২ জন নিহত হয়।