যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফিরতে পারবেন না’ আইএসে যোগ দেওয়া মার্কিন তরুণী

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রচারক হতে দেশ ছেড়ে যাওয়া নারীকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2019, 09:29 AM
Updated : 21 Feb 2019, 09:54 AM

বুধবার এক টুইট বার্তায় তিনি ‘হুডা মুথানা যেন দেশে ফেরার অনুমতি না পায়’ তা দেখতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।  

আলাবামায় বেড়ে ওঠা হুডা চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছিলেন। মার্কিন এ তরুণী সেসময় পরিবারের সদস্যদের তুরস্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

২৪ বছর বয়সী এ নারী সম্প্রতি ১৮ মাস বয়সী এক সন্তানসহ সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদেরকে উত্তর সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও আইএসে যোগ দেওয়া এ নারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন এবং তাকে ফেরত নেওয়া হবে না বলে এর আগে জানিয়েছিলেন। 

“হুডা মুথানার (দাবির) কোনো আইনী ভিত্তি নেই, তার কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই, পাসপোর্টের অধিকার নেই, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য বৈধ ভিসাও নেই,” বলেছিলেন তিনি।

হুডার পরিবার ও তার আইনজীবী এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। হুডা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে দাবি করেছেন তারা।

মার্কিন এ তরুণীর সঙ্গে ২০১৫ সালে লন্ডন ছেড়ে আইএসে যোগ দিতে যাওয়া শামীমা বেগমের কাহিনীর মিল আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। শামীমা এখন ফিরতে চাইলেও যুক্তরাজ্য সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো।

যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া এ নারীকে নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই ট্রাম্প কয়েকদিন আগে ইউরোপের দেশগুলোকে ধরা পড়া আইএস যোদ্ধাদের ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইউরোপ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে না চাইলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কুর্দি বাহিনী ওই আইএস সদস্যদের ছেড়ে দিতে পারে বলেও সতর্ক করেছিলেন তিনি।

হুডার ব্যাপারে অবশ্য তার অবস্থান একেবারেই উল্টো, বলছেন পর্যবেক্ষকরা।

মার্কিন এ নারীর আইনজীবী হাসান শিবলীও বলছেন, ট্রাম্পের অবস্থান ‘অযৌক্তিক’।

“তিনি (ট্রাম্প) ইউরোপীয় দেশগুলোকে তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বলছেন আর এখন মার্কিন নাগরিকদের নিয়ে নাটক করার চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প প্রশাসন অন্যায়ভাবে তার নাগরিকদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে,” বলেছেন তিনি।

হুডা ‘মার্কিন নাগরিক এবং তার একটি বৈধ পাসপোর্ট আছে’ বলেও ভাষ্য শিবলীর। বাবা ইয়েমেনি কূটনীতিক হওয়ায় হুডা যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেও তার নাগরিকত্ব নেই বলে মার্কিন প্রশাসনের ইঙ্গিতও খারিজ করেছেন তিনি।

“তিনি (হুডা) ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে নিউ জার্সির হ্যাকেনস্যাকে জন্মান, এর এক মাস আগেই তার বাবা কূটনীতিক হিসেবে কাজ ছেড়ে দেন,” বলেন এ আইনজীবী।

হুডার ভাষ্য, তুরস্কের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগেই তিনি পাসপোর্ট পেয়েছিলেন। চার বছর আগে সিরিয়ায় পৌঁছে তিনি আরও তিন নারীর সঙ্গে পশ্চিমা পাসপোর্ট পোড়ানোর ছবি টুইটারে পোস্ট করেছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া অন্য এক পোস্টে জঙ্গিদের মার্কিন নাগরিকদের হত্যারও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

শিবলী জানান, তার মক্কেল আইনীভাবেই সব মোকাবিলা করতে চান। দোষী প্রমাণিত হলে হুডা জেল খাটতেও প্রস্তুত, জানান এ আইনজীবী।

“আমরা এমন একটি পয়েন্টে যেতে পারি না, যেখানে আইন ভঙ্গ করলেই কারও নাগরিকত্ব নিয়ে নেওয়া হবে। এমনটা যুক্তরাষ্ট্রে হতে পারে না,” বলেছেন তিনি।