গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদের চালানো ওই আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনের বেশি সেনা নিহত হয়।
নয়া দিল্লি এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করলেও ইসলামাবাদ শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
প্রতিবেশী দেশদুটির মধ্যে এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা চলার মধ্যেই সৌদি ক্রাউন প্রিন্স চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়া ও চীন সফর শুরু করেছেন।
বুধবার নয়া দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি যুবরাজের বৈঠক হয়। পরে এক যৌথ বিবৃতিতে দুই নেতা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ‘পুনরায় সংলাপ শুরু করতে প্রয়োজনীয় শর্ত সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার’ বিষয়ে সম্মত হওয়ার কথা জানান বলে খবর ভারতীয় গণমাধ্যমের।
“রাষ্ট্রীয় নীতির উপায় হিসেবে সন্ত্রাসবাদের ব্যবহার সব দেশকেই পরিত্যাগ করতে হবে,” বিবৃতিতে এমনটা বলা হলেও কাশ্মীরের ঘটনায় পাকিস্তান কিংবা জইশ-ই-মোহাম্মদের দায় নিয়ে কোনো কথা নেই বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
যৌথ বিবৃতিতে দুই নেতা সন্ত্রাসী ও তাদের সংগঠনগুলোর ওপর জাতিসংঘের বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা আরোপের ওপরও জোর দিয়েছেন।
পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারকে জাতিসংঘের বৈশ্বিক সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে ভারত যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একে তারই নিদর্শন বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
এর আগে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন বিষয়ক জাতিসংঘের তালিকা নিয়ে রাজনীতি’ এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। নয়া দিল্লির চাপে মোহাম্মদ দুই দিনের মধ্যেই সেখান থেকে খানিকটা সরে এলেন।
পুলওয়ামা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের কথা না থাকলেও ২০১৪ সালের পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পার্শ্ববর্তী দেশটির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে যে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও ‘ধারাবাহিক চেষ্টা’ চালিয়ে যাচ্ছেন সফররত সৌদি যুবরাজ তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
এর আগে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও মোদী পুলওয়ামায় ‘বর্বর সন্ত্রাসী হামলার’ প্রসঙ্গ তোলেন। বলেন, সন্ত্রাসবাদ মানবতার জন্য যে কী ভয়াবহ বিপদ নিয়ে হাজির হয়েছে, এ ঘটনা তারই নিদর্শন।
“কার্যকরভাবে একে (সন্ত্রাসবাদ) মোকাবিলা এবং সন্ত্রাসবাদকে সহায়তা করে এমন দেশগুলোর ওপর সম্ভাব্য সব ধরনের চাপ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সম্মত হয়েছি আমরা,” বলেছেন মোদী।
অন্যদিকে সৌদি যুবরাজ বলেন, তার দেশ সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের উদ্বেগ মোকাবেলায় ভারত ও এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করবে।
“সবার উদ্বেগ সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ নিয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ থেকে নিরাপদ রাখতে ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে সহযোগিতা করবো আমরা। এ বিষয়ে ভারতের ভূমিকার প্রশংসাও করছি আমরা,” বলেছেন তিনি।
সন্ত্রাসবাদ দমনে সৌদি আরব ভারতের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি করবে বলেও সাংবাদিকদের জানান মোহাম্মদ।
ক্রাউন প্রিন্সের এবারের সফরে নয়া দিল্লি ও রিয়াদের মধ্যে ছয়টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এসব চুক্তির মধ্যে ভারতের জাতীয় বিনিয়োগ ও অবকাঠামো তহবিলে সৌদি বিনিয়োগের বিষয়টিও স্থান পেয়েছে।
“দুই দেশের সম্পর্ককে জ্বালানি অংশীদারিত্বের পর্যায় থেকে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার এটাই সময়। এখন থেকে আমরা কেবল কেনা-বেচার সম্পর্কে থাকছি না। অবকাঠামোতে সৌদি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি,” বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
সৌদি আরব ভারতে দশ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। এর মধ্যে আছে মহারাষ্ট্রের মেগা পেট্রকেমিকেল প্রকল্পে এক হাজার ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের আশ্বাস।