সিরিয়ায় পতনের দ্বারপ্রান্তে আইএসের ‘খিলাফত’

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ার যোদ্ধারা সিরিয়ায় ফোরাত নদীর পাড়ে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) শেষ, ছোট ছিটমহলটি দখল করে নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছে বলে দাবি করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2019, 03:48 PM
Updated : 16 Feb 2019, 03:58 PM

শনিবার যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফের) যুদ্ধ পরিচালনাকারী কমান্ডার জিয়া ফুরাত এ দাবি জানিয়েছেন বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

বাঘুজ নামের এই ছিটমহলটির নিয়ন্ত্রণ হারালে আইএসে স্বঘোষিত ‘খিলাফত’ পুরোপুরি পরাজিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইএসের ‘খিলাফত’ এখন ইরাক সীমান্তের নিকটবর্তী বাঘুজের কয়েক বর্গমাইল ক্ষুদ্রপল্লী ও কৃষিখেতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।  

এসডিএফের যোদ্ধারা এলাকাটির অবশিষ্ট আইএস জঙ্গিদের বাঘুজের একটি এলাকায় কোনঠাসা করে ফেলেছে এবং জঙ্গিরা চারদিক থেকে ঘেরাও হয়ে এসডিএফের গুলির মুখে আছে বলে জানিয়েছেন কমান্ডার ফুরাত।

“আগামী কয়েক দিনের মধ্যে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে, সামরিকভাবে দায়েশের (আইএস) পতনের শুভ সংবাদটি বিশ্বকে জানাবো আমরা,” বলেছেন তিনি।

এর আগে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সিরিয়ার বিষয়ে ‘বিশাল ঘোষণা’ আসতে পারে।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ব্যাপক মার্কিন বিমান হামলায় ছত্রছায়ায় আইএসে শেষ ঘাঁটির দিকে এসডিএফ অগ্রসর হওয়া শুরু করতেই বাঘুজ থেকে পলায়নপর বেসামরিকদের স্রোত শুরু হয়, এদের আড়ালে পরাজিত জঙ্গিরাও পালাতে চেষ্টা করে।

এদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছে এসডিএফ।

এসডিএফ জানিয়েছে, আইএসের যেসব যোদ্ধারা বাঘুজে আছে তাদের অধিকাংশই বিদেশি। 

অবশিষ্ট এই যোদ্ধাদের ৭০০ বর্গমিটারের একটি পকেটের মধ্যে ঘিরে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফুরাত।

“মানবঢাল হিসেবে এখনও সেখানে কয়েক হাজার বেসামরিক আটকা পড়ে আছেন,” বলেছেন তিনি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করার পর এসডিএফ পুরো বাঘুজের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এসডিএফের কর্মকর্তারা এ খবর অস্বীকার করেছেন। 

আইএসের যোদ্ধারা এখনও সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় প্রত্যন্ত মরুভূমিতে একটি ছোট এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখলেও এবং তাদের যোদ্ধারা পালিয়ে গিয়ে স্লিপার সেল হিসেবে ইরাকের শহরগুলোতে আশ্রয় নিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখলেও, তাদের আঞ্চলিক শাসন আপাতত প্রায় শেষ। 

২০১৪ সালে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় মুসল শহরের মধ্যযুগীয় একটি মসজিদে এই খিলাফতের ঘোষণা দিয়েছিলেন জঙ্গিগোষ্ঠীটির প্রধান আবু বকর আল বাগদাদী। নিজেকে তিনি মুসলিম জাহানের খলিফা হিসেবেও দাবি করেছিলেন।

আদালত, মুদ্রা ও পতাকাসহ বাগদাদী একটি শাসন ব্যবস্থাও চালু করেছিলেন।তার এই খিলাফতের সীমানা উত্তরপশ্চিম সিরিয়া থেকে প্রায় বাগদাদ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। প্রায় ২০ লাখ লোক এই এলাকাটির বাসিন্দা ছিল।

আইএসের শাসন কায়েমের পর তারা এই এলাকার সংখ্যালঘু ও অন্যান্য যাদের শত্রু বলে বিবেচনা করেছে তাদের নির্বিচার হত্যা, নারীদের যৌনদাসী হতে বাধ্য করা ও জিম্মিদের শিরশ্ছেদ করে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আতঙ্কের আবহ ছড়িয়ে দেয়।

এ পরিস্থিতিতে তাদের দমন করতে এগিয়ে আসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলো ২০১৫ সাল থেকে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে পিছু হটতে শুরু করে আইএস, তাদের দখলকৃত এলাকার সীমানাও সঙ্কুচিত হতে শুরু করে, যেটি এখন পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।