মিয়ানমার: সু চির এনএলডিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুতি নতুন দলগুলোর

আগামী বছরের পার্লামেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে জোর প্রস্তুতি নেওয়া নতুন কয়েকটি দল ও জোট মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) পুনরায় সংখ্যাগিষ্ঠতা অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2019, 11:35 AM
Updated : 14 Feb 2019, 11:35 AM

রাখাইনসহ বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঠেকাতে দুর্বল ভূমিকার পাশাপাশি অর্থনীতির শ্লথ প্রবৃদ্ধির কারণে গত কয়েক বছরে এনএলডির জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধস নেমেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

নভেম্বরের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের তুলনামূলক খারাপ ফলাফলও নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে আশাবাদী করে তুলেছে।

দুই মাস আগের ওই উপনির্বাচনে ১৩টি আসনের মধ্যে সু চির দল মাত্র ৭টিতে জয়ী হয়েছিল; সেনাঘনিষ্ঠ দল ও আঞ্চলিক দলের প্রার্থীরা বাকিগুলোতে জয়লাভ করেছিলেন।   

জনসমর্থনের এই হাল এনএলডির অনেক শীর্ষ নেতাকেও আতঙ্কিত করে তুলেছে।

নতুন দলগুলোর কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক সমীকরণে আগেরবারের মতো সহজেই জয়ী হওয়ার আশা করা যাবে না বলেও মত তাদের।  

“এখন বিভিন্ন জাতিগত দল একে অপরের সঙ্গে জোট বাধছে ও প্রস্তুত হচ্ছে, আমরা কেবলমাত্র পার্টির ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। জনগণের আস্থা অর্জনে আমাদের আগের তুলনায় বেশি চেষ্টা করতে হবে,” বলেছেন মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাচিন থেকে নির্বাচিত এনএলডির আইনপ্রণেতা দাশি লা সেং।

নভেম্বরের উপনির্বাচনে কাচিনের একটি আসনেও সু চির দল পরাজিত হয়েছে।

২০১৫-র পার্লামেন্ট নির্বাচনে এনএলডি সারা দেশেই বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও অবশ্য তাদের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নেই।

মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত থাকে।

২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযানের পর দেশটির প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বাসিন্দা সীমান্ত টপকে বাংলাদেশে চলে আসে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সু চির অবস্থান দেশে-বিদেশে তুমুল সমালোচনার জন্ম দেয়।

মিয়ানমারের এ ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অবশ্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইয়াংগুনের একটি মুসলিম স্কুলে হাজির হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে তার ও সরকারের অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

বিদেশি বিনিয়োগ এনে তরুণদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে একটি সম্মেলনও করেছেন তিনি। সেনাবাহিনীর প্রভাব কমানোর লক্ষ্য তার দল এনএলডি সম্প্রতি পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনায় একটি কমিটিও করেছে।

সাধারণ নির্বাচনের আগে এ পদক্ষেপগুলো দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবে বলে ক্ষমতাসীনদের থিংট্যাঙ্ক মনে করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন দলগুলো এই পথে কাঁটা হয়ে উঠতে পারে।

“পরবর্তী সংসদে এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যদি তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তাহলে তাদেরকে অন্যদের সঙ্গে জোট বা মধ্যস্থতা করা লাগতে পারে,” বলেছেন তাগুং ইনস্টিটিউট অব পলিটিকাল স্টাডিজের ইয়ে মিয়ো হিন।

সু চির দলের জন্য যারা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে তাদের মধ্যে ইউনিয়ন বেটারমেন্ট পার্টি অন্যতম, বলছে রয়টার্স।

সেনাঘনিষ্ঠ ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাবেক প্রধান শ মান এ দলটি গড়ে তুলেছেন।

মিয়ানমারের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সাবেক স্পিকার মান ২০১৫ সালে জান্তাঘনিষ্ঠ দলটি থেকে পদচ্যুত হয়েছিলেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে সু চির মিত্রতা দেখা গেলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার ইউনিয়ন বেটারমেন্ট পার্টি ক্ষমতাসীনদের অন্যতম বড় সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

এনএলডির অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হাজির হতে পারে কো কো গির পিপলস পার্টিও। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে হওয়া ছাত্রবিক্ষোভের অন্যতম নেতা কো কো অন্যান্য জাতিগত দলের সঙ্গে জোট গড়ে তোলারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

“আমরা এককভাবে না জিততে পারলেও পার্লামেন্টে জোট হিসেবে থাকতে পারি। সেখানে আমরা একসঙ্গে থাকবো, এবং আমাদের ভোট যেন দ্বিধাবিভক্ত না হয় সেজন্য চেষ্টা চালাবো,” বলেছেন তিনি। 

২০১৫-র নির্বাচনে রাখাইনে ভালো ফল করা আরাকান ন্যাশনাল পার্টিও ক্ষমতাসীনদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে, বলছে রয়টার্স। স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো না দেওয়ায় এ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও তুমুল ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।

“আমরা, বিভিন্ন জাতির মানুষ, আমরা দেখেছি আমাদেরকে তারা কেমন মূল্য দেয়। ২০২০ এর মতো এবার আর ভূমিধস বিজয় পাচ্ছে না তারা,” বলেছেন রাখাইনে সমানাধিকার ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান থাজিন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও অং থান।