চীনের বিপুল পরিমাণ বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচির পাশাপাশি উভয় দেশের নিবিড় চাষাবাদ কার্যক্রম পৃথিবীকে ‘আরও সবুজ’ করেছে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।
এশিয়ার এ দেশ দুটির নেতৃত্বে প্রতি বছর বিশ্বের ২০ লাখ বর্গমাইলেরও বেশি এলাকা সবুজ হচ্ছে; ২০০০ এর শুরুর দিককার তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ, জানিয়েছে বিবিসি।
অতিরিক্ত এ পর্ণরাজি জলবায়ু পরিবর্তনের লাগাম টেনে ধরতে সাহায্য করলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে উল্টো সবুজায়নের এ প্রক্রিয়াই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।
গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ উদ্ভিদ ও গাছ বেড়েছে তা একত্রিত করলে আমাজনের চিরহরিৎ বনের সমপরিমাণ হবে বলে নাসার উপগ্রহের পাঠানো তথ্যে দেখা যাচ্ছে।
গত শতকের নব্বই দশকের মাঝামাঝি প্রথম সবুজায়নের ক্ষেত্রে এ ইতিবাচক পরিবর্তনের চিহ্ন ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীরা তখন বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড এবং উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ুর কারণেই উদ্ভিদের এ বাড়বাড়ন্ত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন।
কৃষিকাজ ও বনায়নই যে আদতে এ পরিবর্তনের মূল, তা তারা জানতেন না।
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা নাসার দুটি কৃত্রিম উপগ্রহের ভেতর থাকা মডারেট রেজ্যুলেশন ইমেজিং স্পেকট্রোরেডিও মিটারের (মোডিস) বদৌলতেই সম্প্রতি তা জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-সাসটেইনেবিলিটি’-র সাম্প্রতিক সংখ্যায় নাসার উপগ্রহের তথ্যের ভিত্তিতে নতুন এ গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।
বন সংরক্ষণ ও বিস্তৃত কর্মসূচির মাধ্যমে চীনই মূলত বিশ্বের সবুজায়নে দিকপালের ভূমিকা পালন করছে; গত দুই দশকে বিশ্বের সবুজ হওয়া অঞ্চলের ৪২ শতাংশই তাদের হাত ধরে এসেছে, জানিয়েছে নাসা।
মাটি ক্ষয়, বায়ু দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে বেইজিং এ বন সংরক্ষণ ও বিস্তৃত কর্মসূচি হাতে নেয়।
চীন যে পরিমাণ এলাকা নতুন করে সবুজ করেছে তার ৩২ শতাংশ, আর ভারতের করা সবুজায়নের ৮২ শতাংশই সার ও সেচ সহযোগে খাদ্যশস্যের নিবিড় চাষাবাদের কল্যাণে হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানিয়েছেন গবেষকরা।
বিবিসি বলছে, ২০০০ সালের পর থেকে চীন ও ভারতে খাদ্যশস্য, সবজি, ফল ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ; যার ফলে বিপুল জনসংখ্যার দেশ দুটিকে তেমন খাদ্য ঘাটতিতেও পড়তে হয়নি।
সবুজায়নের এ প্রবণতা সামনের দিনগুলোতে অনেক কারণেই থমকে যেতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় ভারতে কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলে, তা উদ্ভিদের এ গ্যাস গ্রহণের প্রবণতাও কমিয়ে দিতে পারে।
বাড়তি এ উদ্ভিদে বৈশ্বিক উষ্ণতা, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, হিমবাহের গলন, সমুদ্রের অম্লতা বেড়ে যাওয়া, মেরু অঞ্চলের বরফ গলা এবং ক্রান্তীয় ঝড়ের আঘাতের ক্ষতিপূরণ হবে না বলে সতর্ক করেছেন বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রঙ্গ মাইনেনির।