যুক্তরাষ্ট্রে বিচারে দোষী সাব্যস্ত মাদক সম্রাট গুজমান

মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদ্রক সম্রাট হোয়াকিন 'এল চ্যাপো' গুজমানকে মাদক পাচারের ১০টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল আদালত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2019, 07:04 PM
Updated : 13 Feb 2019, 04:26 AM

ওই ১০ অভিযোগে তার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। 

এ মামলায় বিশ্বের সবচেয়ে সংগঠিত মাদক পাচার ও অপরাধ চক্র সিনালোয়ার নেতৃত্ব দেওয়া এবং সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার টন মাদক পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল গুজমানের বিরুদ্ধে। কৌঁসুলিরা বলছেন, সিনালোয়াই যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় মাদক সরবরাহ চক্র।

গুজমান মেক্সিকোর  সুরক্ষিত কারাগার আল্টিপ্লানো থেকে দ্বিতীয়বারের মত পালানোর পর তাকে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ফের আটক করে পুলিশ। ওই বছরই গুজমানকে বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ২০১৭ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১১ সপ্তাহ ধরে গুজমানের বিচার চলার পর নিউ ইয়র্কে ব্রুকলিনের আদালতের জুরিরা মঙ্গলবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করার ওই রায় শুনিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক পাচার, অস্ত্র ও অর্থ পাচার, খুন, অপহরণ, নির্যাতনসহ ১০টি অভিযোগ আনা হয়েছিল।

কে এই গুজমান?

৬১ বছর বয়সী গুজমান 'এল চাপো' বা 'পিচ্চি' নামেও পরিচিত। পুরো নাম হোয়াকিন গুজমান লোয়েরা পেরেজ। মেক্সিকোয় সিনালোয়ার বাডিরাগুয়াতোয় লা তুনা গ্রামে এক গরিব পরিবারে তার জন্ম। ছোটবেলায় গাঁজাও বিক্রি করেছেন তিনি।

এক পর্যায়ে গুজমান হয়ে ওঠেন কুখ্যাত। গত কয়েক দশকে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সুগঠিত ও শক্তিশালী অপরাধ চক্রের ‘বস’ হয়ে ওঠেন। এমনকি ফোর্বস সাময়িকীতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোটিপতিদের তালিকায় তার নাম উঠে আসে।

মেক্সিকো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালানের কয়েকটি অভিযোগ ছিল গুজমানের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় উঠেছিল তার নাম।

১৯৮০’র দশকে তিনি মাদকচক্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। সিনালোয়া মাদক চোরাচালান চক্রের প্রধান হওয়ার পরই বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড মাদক পাচারকারীর তালিকায় তার নাম ওঠে। এ চক্র যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণে কোকেইন, মারিজুয়ানাসহ মেথাফেটাফিন চোরাচালান করে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ একবার তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ৫০ লাখ ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল।

আদালতের শুনানিতে গুজমানের জীবন কাহিনী

গুজমানের বিচার চলাকালে আদালতের শুনানিতে উঠে এসেছে তার জীবনের ভয়ংকর সব অপরাধের ঘটনা। ১৩ বছরের মেয়েদের মাদক খাইয়ে ধর্ষণ করার মত ঘটনাও এর মধ্যে রয়েছে।

অল্পবয়সী এ মেয়েদেরকে ‘ভিটামিন’ এর সঙ্গে তুলনা করে এদেরকে নিজের জীবনীশক্তি বলেই বিশ্বাস করতেন গুজমান। তিনি অন্তত তিনজনকে খুন করেছেন বলে সাক্ষী দিয়েছেন একজন।

গুজমানের সাবেক এক দেহরক্ষী বলেন, দুই ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক চক্রে যোগ দেওয়ার কারণে গুজমান তাদেরকে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছিলেন। তারপর তিনি তাদের মাথায় গুলি করেন এবং দেহ আগুনে ছুড়ে ফেলার নির্দেশ দেন।

আরেকটি ঘটনায় গুজমান প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক চক্র আরেল্লানো ফেলিক্স কার্টেলের এক সদস্যকে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার আগে আগুনে পোড়ান এবং বন্দি করে রাখেন। পরে তাকে গুলি করে জ্যান্ত পুঁতে দেন।

গুজমান তার জ্ঞাতিভাইকেও মিথ্যা কথা বলার কারণে খুন করেছিলেন এবং তার সঙ্গে করমর্দন না করার জন্য অন্য একটি মাদক চক্রের নেতার ভাইকে খুন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ আছে।