ধর্ম অবমাননা: আসিয়া বিবির মুক্তির রায় পর্যালোচনা করবে পাকিস্তান

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থেকে আসিয়া বিবির খালাস পাওয়ার রায় পর্যালোচনা (রিভিউ) করে দেখবে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। যে রায় পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ উস্কে দিয়েছিল।

>>রয়টার্স
Published : 28 Jan 2019, 03:43 PM
Updated : 28 Jan 2019, 04:15 PM

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চে আসিয়া বিবিরি মুক্তির বিরুদ্ধে আনা পিটিশনের শুনানি হবে।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাকিস্তানের খ্রিস্টান নারী আসিয়া আট বছর মুলতানের কারাগারে কাটানোর পর মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে আছেন।

গত অক্টোবরে মৃত্যুদণ্ডের রায় বদলে আসিয়াকে খালাস দিয়েছিল পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট, যা নিয়ে দেশটির কট্টরপন্থি মুসলিম দলগুলো তুমুল বিক্ষোভ করে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পাঁচ সন্তানের জননী আসিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই সময় স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে আসিয়াকে একটি বিমানে তোলার খবর জানালেও বিমানটির গন্তব্য কোথায়, তা বলতে পারেনি।

পাকিস্তানের কট্টরপন্থি দলগুলো আসিয়ার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করছে এবং তাকে দেশ ত্যাগে বাধা দিতে সরকারের উপর চাপও সৃষ্টি করছে।

সহিংসতা ও বিক্ষোভ থামাতে আসিয়ার দেশত্যাগে বাধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরকার। নিরাপত্তার জন্য আসিয়াকে পাকিস্তানেরই একটি গোপন জায়গায় পাহারা দিয়ে রাখা হয়।

ওদিকে, আসিয়ার আইনজীবী সাইফ মুলুক  প্রাণভয়ে দেশ ত্যাগ করে ইউরোপে চলে যান। আর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আসিয়ার স্বামী আশিক মসিহ নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

বেশ কয়েকটি দেশ অবশ্য আগে থেকেই আসিয়াকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট আগের রায় বহাল রাখলে আসিয়া পাকিস্তান ছাড়তে পারবেন।

সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের পর্যালোচনার (রিভিউ) আবেদন সাধারণত খারিজ হয়ে যায়। আসিয়ার ক্ষেত্রেও রিভিউ  আবেদন খারিজ হয়ে যাবে বলে আশা তার আইনজীবী সাইফের। এ সপ্তাহেই তিনি ইউরোপ থেকে পাকিস্তানে ফিরেছেন।

আসিয়া বিবির মামলা তিনিই লড়বেন জানিয়ে বলেন, “তারা যে গ্রাউন্ডে পিটিশন করা হয়েছে তা খুবেই দুর্বল। সাংবিধানিকভাবে তারা আমার মক্কেলের মুক্তি আটকাতে পারবে না। খোদার ইচ্ছায় আগামীকালের সিদ্ধান্ত আমার মক্কেলের পক্ষেই যাবে। তিনি একজন মুক্ত মানুষের মত নিজের ইচ্ছায় চলতে পারবেন।”

মুক্তির পর তাকে হত্যা করা হতে পারে আশঙ্কায় আসিয়া বিদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন বলে জানা গেছে। কানাডা আসিয়াকে আশ্রয় দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত নভেম্বরে কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে কথা বলার কথা জানিয়েছিলেন।

২০১০ সালে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মুসলমানদের নবী মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগে আসিয়া গ্রেপ্তার হন। তারপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন।

শুরু থেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও নিম্ন আদালত তাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়; হাইকোর্টও পরে একই সাজা বহাল রাখে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়, একে মানবাধিকারের চরম লংঘন বলেও অনেকে অভিহিত করেন।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ায় বিভিন্ন আইনেও এর প্রভাব বিদ্যমান। দেশটিতে ধর্ম অবমাননা (ব্লাসফেমি) আইনের পক্ষে শক্ত জনসমর্থন আছে। নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে কট্টরপন্থি রাজনীতিবিদরাও প্রায়ই ধর্ম অবমাননা আইনে চরম শাস্তির পক্ষে সমর্থন দিয়ে থাকেন।