উত্তর কোরিয়ার `অঘোষিত ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র সদরদপ্তর’

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যক্রম পরিচালিত হয়, এমন অঘোষিত ২০টি ঘাঁটির একটিকে উত্তর কোরিয়া তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনার সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহার করছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2019, 08:10 AM
Updated : 22 Jan 2019, 08:10 AM

সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্কটি এ দাবি করেছে বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

সিএসআইএসের ওই প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ার অঘোষিত ২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালন কেন্দ্রের মধ্যে সিনো-রি ঘাঁটিকেই পিয়ংইয়ং ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রমের সদরদপ্তর বানিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

“সিনো-রি ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনা কেন্দ্র, সেখানে নোডং ক্ষেপণাস্ত্রও মোতায়েন রয়েছে। কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো পরমাণু কিংবা প্রচলিত উপায়ে প্রথম আঘাত হানার সক্ষমতা সম্পন্ন এ কেন্দ্রটি উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য পারমাণবিক সামরিক কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ,” বলেছেন সিএসআইএসের প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ভিক্টর ছা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রসঙ্গে ফেব্রুয়ারির শেষে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আরেকটি শীর্ষ বৈঠকের পথে ‘অগ্রসর হওয়ার’ ঘোষণা দেওয়ার তিনদিন পর সিএসআইএসের এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেল।

এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের মন্তব্য চাওয়া হলেও তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। 

গত বছরের জুনে সিঙ্গাপুরের সানতোসা দ্বীপে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রথম ঐতিহাসিক বৈঠকে ট্রাম্পের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম। ওই বৈঠবে কিম পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে এ বিষয়ে অগ্রগতি যৎসামান্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সিএসআইএস গত বছরের নভেম্বরে উত্তর কোরিয়ার ভেতরে ২০টি অঘোষিত ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি আছে বলে দাবি করেছিল।

থিঙ্কট্যাঙ্কটি বলছে, উত্তর কোরিয়া কখনোই সিনো-রি’কে ঘাঁটি হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনাতেও এই অঘোষিত ঘাঁটিটির প্রসঙ্গ আসেনি।

পরমাণু নিয়ে যে কোনো চুক্তির আলোচনায় এ ধরনের অঘোষিত কেন্দ্রের স্বীকারোক্তি, সেখানকার নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া যাচাই ও কেন্দ্রগুলো ভেঙে ফেলার সুস্পষ্ট  উল্লেখ থাকা উচিত, মন্তব্য তাদের।

“যা তারা প্রকাশ করতে চায় না, তা নিয়ে মধ্যস্থতা করবে না উত্তর কোরিয়া। মনে হচ্ছে, তারা যেন খেলছে। তারা যদি তাদের ঘোষিত কেন্দ্রগুলো ধ্বংসও করে দেয়, তারপরও সব ধরনের কাজ চালানোর সক্ষমতা থাকবে তাদের,” বলেন সামরিক বিশ্লেষক ছা।

দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এমনকী প্রশান্ত মহাসাগরে থাকা মার্কিন ভূখণ্ড গুয়ামে আঘাত হানতে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে ১৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নির্মিত সিনো-রি ঘাঁটিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও দাবি সিএসআইএসের।

এ ঘাঁটিটি দুই কোরিয়ার অসামরিক এলাকা থেকে ২১২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে তারা।

মার্কিন এ থিঙ্কট্যাঙ্কের প্রতিবেদনে ‘ক্ষেপণাস্ত্র সদরদপ্তর’ সিনো-রি’তে এক রেজিমেন্ট সৈন্যের পাশাপাশি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নোডং-১ মোতায়েন আছে বলেও জানানো হয়েছে।

সিএসআইএস জানিয়েছে, ২৭ ডিসেম্বর সিনো রি ঘাঁটির উপগ্রহের ছবিতে একটি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার, সৈন্যদের আশ্রয়স্থল ও একটি সদরদপ্তর দেখা গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, তারা সিনো-রি ঘাঁটিতে নোডং (রোডং নামেও পরিচিত) ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই অবগত।

সোভিয়েত আমলের স্কাড প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত মাঝারি পাল্লার এ ক্ষেপণাস্ত্রটি উত্তর কোরিয়া গত শতকের নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে মোতায়েন শুরু করে।

সিউল উত্তরের এ সিনো-রি ঘাঁটির ওপর নজর রাখছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের মুখপাত্র কিম জুন-রাক।

“নিজেদের স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় আমরা এ (সিনো-রি) স্থাপনাটিকে পর্যবেক্ষণ করে আসছি,” মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এমনটাই বলেছেন।