মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল তুন তুন নি শুক্রবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “গত ৫ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি ২০১৯’র মধ্যে রাখাইনে আটবার সংঘর্ষ হওয়াসহ পাঁচটি স্থলমাইন বিস্ফোরিত হয়েছে। ওই সব স্থান থেকে শত্রু যোদ্ধাদের ১৩টি মৃতদেহ এবং তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের কয়েকজন সেনাও হতাহত হয়েছেন।”
সেনাবাহিনীর কতজন সেনা হতাহত হয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ সংখ্যা জানার কোনো প্রয়োজন নেই।”
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে ‘আরাকান আর্মি’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তবে মিয়ানমারের বাইরে অবস্থান করা দলটির এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, সেনাবাহিনীর উদ্ধার করা ৫ টি মৃতদেহ ‘আমাদের যোদ্ধাদের নয়’।
গত ৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসে রাখাইনে চারটি সীমান্ত পোস্টে বিদ্রোহীদের হামলায় অন্তত ১৩ পুলিশ নিহত হওয়ার জেরে সরকার সেনাবাহিনীকে রাজ্যটিতে ‘বিদ্রোহ গুঁড়িয়ে দেওয়ার’ নির্দেশ দেয়।
এরপর থেকেই রাখাইনে পৌঁছেছে সামরিক বাহিনীর সারি সারি বিমান ও ট্রাক। নতুন করে সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্ষে রাজ্যটি ফের অশান্ত হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বরে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি’র মধ্যে লড়াইয়ের কারণে পাঁচ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
রাখাইনে স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে প্রায় এক দশক আগে আদিবাসী বৌদ্ধদের দল ‘আরাকান আর্মি’ সংগঠিত হয়। গোষ্ঠীটি সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের পাশপাশি ২০২০ সালের মধ্যে রাখাইন জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে দিতে নানা রকম প্রচার চালাচ্ছে।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নিজে ব্যক্তিগতভাবে সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহী ‘আরাকান আর্মি’ কে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের মতো একইভাবে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন মেজর জেনারেল তুন তুন নি।
তিনি বলেন, “৯ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ভবনে আলোচনার সময় স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি আরাকান আর্মি-এএ কে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে অভিহিত করেন এবং তাদের কার্যকরভাবে নির্মূল করার নির্দেশ দেন।”
“সু চি বলেন, যদি সেটা না হয় তবে অন্যরা বলবে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি-(এআরএসএ) অন্য ধর্মের হওয়ায় তাদের নির্মূল করা হয়েছে, আর আরাকান আর্মি (এএ) আদিবাসীদের দল হওয়ায় তাদেরকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।”
এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্রকে তাৎক্ষণিকভাবে ফোনে পাওয়া যায়নি।
২০১৭ সালের শেষ দিকে সীমান্ত পোস্টে এআরএসএ’র হামলায় কয়েকজন পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা অভিযান শুরু হয়েছিল, প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
যা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি সরকারের ‘নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক’ অবস্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
মিয়ানমার জুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা সু চি সরকারকে এবার পরীক্ষায় ফেলেছে আরাকান আর্মি।
রাখাইনে জাতিগত সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সেখানে নতুন করে আবারও সহিংসতা মাথাচাড়া দেওয়ায় এ সংকট আরো গভীর হয়েছে। জাতিসংঘ যাকে ‘সাইকেল অব ভায়লেন্স’ বলে বর্ণনা করেছে।