অচলাবস্থা: শান্ত মৌসুমে ‘ভুতুড়ে’ নগরীর রূপ ওয়াশিংটনের

অনেক হোটেলই ফাঁকা পড়ে আছে, ঝাঁপি খোলা রাখতে রেস্টুরেন্টগুলো ভাবছে ঋণের কথা, ট্যুর কোম্পানিগুলোতেও বাজছে না ফোন; জানুয়ারির এই সময়ে ভ্রমণপিয়াসুদের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও এমন ‘ভুতুড়ে’ অবস্থায় আর কখনো পড়েনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2019, 09:40 AM
Updated : 17 Jan 2019, 10:31 AM

চার সপ্তাহ ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থায় চলা আংশিক অচলাবস্থার কারণে অনেকটাই ফাঁকা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী। পর্যটকের অভাবে তাই লগ্নি নিয়েই গলদঘর্ম হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনার সাক্ষী এ ওয়াশিংটনে প্রতিবছর দুই কোটিরও বেশি পর্যটকের পা পড়ে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ভ্রমণপিপাসুরা এখানকার স্মিথসনিয়ান জাদুঘর, মন্যুমেন্ট, ক্যাপিটল হিল ও হোয়াইট হাউস দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন; যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থা এবার তাতে বাঁধ সেধেছে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়ার পাশাপাশি অচলাবস্থার কারণে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান বন্ধ হয়ে গেছে; যা হুমকির মুখে ফেলেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।     

“সত্যিকার অর্থেই মনে হচ্ছে ফোন আরও বেশি বাজা দরকার। আমার ধারণা মানুষ নিকট ভবিষ্যতেও ট্যুর বুক করার ক্ষেত্রে সন্দিহান থাকবে,” বলেছেন ওয়াশিংটন ডিসির কাস্টম ট্যুরস কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী অ্যাডাম প্লেসিয়া।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিসেম্বরের দীর্ঘ ছুটি আর মার্চের চেরি ফুল ফোটার উৎসবের আগে জানুয়ারির দিকে ব্যবসা খানিকটা মন্দাই যায়। যদিও এবারকার মতো ‘কানে তালা লাগানো স্তব্ধতা’ থাকেনা।

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাহিদা অনুযায়ী ৫৭০ কোটি ডলার বরাদ্দ না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ২৬ দিন ধরে চলা অচলাবস্থার কারণে ওয়াশিংটনের ১৭টি স্মিথসনিয়ান জাদুঘর বন্ধ রয়েছে; পর্যটকদের জন্য বন্ধ হোয়াইট হাউসের দরজাও।

ন্যাশনাল মলের আউটডোর মন্যুমেন্টে প্রবেশাধিকার থাকলেও ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের কর্মী সংকটের কারণে সেখানকার উপচে পড়া ময়লার জঞ্জাল সরাতে না পারায় সেটিও আকর্ষণ হারিয়েছে।

ভ্যানে চড়িয়ে ও হেঁটে শহর দেখানো ওয়াশিংটন ডিসি লিজেন্ড ট্যুর কোম্পানির মালিক ইয়োহানেস জেকেলে জানিয়েছেন, কয়েকদিন হয়ে গেল তিনি পর্যটকদের কাছ থেকে ট্যুর বুকিংয়ের ফোন পাচ্ছেন না।

রাজধানীতে বিভিন্ন সম্মেলনে আসা পেশাদার ব্যক্তি ও লবিস্টদেরও প্রায়ই শহর ঘুরিয়ে দেখাতেন জেকেলে; অচলাবস্থায় অনেক সরকারি সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে ধরনের ট্যুরিস্টরাও আর এ পথ মাড়াচ্ছেন না।

“এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে,” বলেন এ ট্যুর কোম্পানির মালিক।

চার সপ্তাহ ধরে চলা এ অচলাবস্থা সব পর্যটককেই রাজধানী থেকে দূরে রেখেছে এমনটা বলা যাবে না; তবে যারা এসেছে তাদের অনেকেই বেশ হতাশ।

এদেরই একজন শারমেন হুইটার। ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম থেকে আসা ৩৮ বছর বয়সী এ শিক্ষক তীব্র শীতেও এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে হোয়াইট হাউসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট কোস্টের বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়ানো এ নারীর শেষ স্টপেজই ছিল ওয়াশিংটন; তার চার সপ্তাহের এ সফরের পরিকল্পনা হয়েছিল অচলাবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরুরও বেশ আগে।

ব্রিটিশ এ নারী তার ভ্রমণপর্বে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার দায় দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।

“সারাজীবনে এ ধরনের সুযোগ একবারই আসে। তিনি আমাদের আমেরিকা থেকে অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছেন। তার নিজের পছন্দের কারণে তিনি বাকি বিশ্বের অন্যদের পছন্দকে অনেকটাই গুড়িয়ে দিয়েছেন,” বলেছেন শারমেন। 

কম পর্যটক এবং অচলাবস্থায় কর্মী সংকটের কারণে স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোর ব্যবসায় ‘ভয়াবহ মন্দা’ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটন শহরের রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী ক্যাথি হুলিংগার।

“পুরোপুরি বন্ধ করার বদলে রেস্তোরাঁগুলো সময় ও শিফট কমিয়ে এনেছে, কেউ কেউ সপ্তাহে একদিন কম চালানোর কথা ভাবছে, কারণ পর্যাপ্ত ব্যবসা হচ্ছে না,” বলেছেন তিনি।

রেস্টুরেস্ট অ্যাসোসিয়েশনের এ প্রধান নির্বাহী জানান, অচলাবস্থার পর থেকে স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোর গড় বিক্রি ২০ শতাংশের মতো কমে গেছে; কারও কারও ক্ষেত্রে এ হার ৬০ শতাংশের কাছাকাছি।

এ দুরাবস্থায় অনেক রেস্তোরাঁই ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছে, হোটেলগুলো বিভিন্ন ফ্লোর খালি করে ফেলছে বলে রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের করা এক জরিপেও উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ডিসেম্বরের ৩০ থেকে ৫ জানুয়ারি পুরো সপ্তাহজুড়ে হোটেলগুলো আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ খালি ছিল বলে জানিয়েছে স্বনির্ভর ট্যুরিজম মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান ডেস্টিনেশন ডিসি।

২০১৭ সালে ওয়াশিংটনে দুই কোটি ২৮ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছে এবং প্রায় ৭৫০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে বলে জানিয়েছে তারা।