আস্থার পরীক্ষায় মে, বিচ্ছেদের চক্করে ব্রিটেন

ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ভোটাভুটিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হারের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মেকে এখন আস্থা ভোটের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2019, 08:28 AM
Updated : 16 Jan 2019, 08:46 AM

প্রধানমন্ত্রী মে এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগেই যুক্তরাজ্যকে আরেকটি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিতে হতে পারে। কিন্তু তারপরও ব্রেক্সিট সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে হবে যুক্তরাজ্যকে। সেক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে ব্রেক্সিট প্রশ্নে আরেকটি গণভোট।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদের পথরেখার যে পরিকল্পনা টেরিজা মে পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সে উপস্থাপন করেছিলেন, মঙ্গলবার ৬৫০ সদস্যের পার্লামেন্টে তা ৪৩২-২০২ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের পার্লামেন্টের ইতিহাসে এর আগে আর কোনো প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলকে এত বড় হার মেনে নিতে হয়নি। লেবার পার্টি ও ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের এমপিদের পাশাপাশি টেরিজা মের রক্ষণশীল দলের অনেকেই ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

ভোটের পরপরই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব তোলেন। বুধবার সন্ধ্যায় পার্লামেন্টে সেই পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে টেরিজা মের সরকারকে।

২০১৬ সালের ২৩ জুন যুক্তরাজ্যে এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দেশটির চার দশকের সম্পর্কোচ্ছেদের রায় হয়। ভোটে হারের পর রক্ষণশীল দলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করলে টেরিজা মে সেই দায়িত্ব নিয়ে বিচ্ছিন্নতার পথরেখা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এই জোট থেকে কোন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য আলাদা হবে এবং এরপর ইইউভুক্ত বাকি ২৭টি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে, সেই পথ বের করার জন্য সময় নেওয়া হয় ২১ মাস।

আগামী ২৯ মার্চ সেই সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার আগে যুক্তরাজ্যকে তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে ইইউর সঙ্গে আলোচনা করে তৈরি করা খসড়া চুক্তি মঙ্গলবার পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে তুলেছিলেন মে।

হাউস অব কমন্সে এই ভোট হওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরেই। কিন্তু নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রী মে তা পিছিয়ে দেন।

মের আশা ছিল, হয়ত এই সময়ে কিছু এমপির সমর্থন তিনি আদায় করতে পারবেন। কিন্তু তা যে হচ্ছে না, তা এমপিদের কথায় আগেই বোঝা গিয়েছিল।

একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম মঙ্গলবার ভোটের আগে লিখেছিল, ভোটাভুটির ফল কী হবে, তা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। টেরিজা মেকে কতটা বড় ব্যবধানে হারতে হচ্ছে, সেটাই দেখার বিষয়।

বিবিসি লিখেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার কথা ২৯ মার্চ মধ্যরাতে। সেই হিসেবে সময় আছে আর মাত্র ৭৩ দিন। কিন্তু সেই বিচ্ছেদ কীভাবে হবে, তা আবার অনিশ্চিত করে দিল পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে এমপিদের সিদ্ধান্ত।

“সাধারণত এ ধরনের বড় পরাজয়ের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে বলাই বাহুল্য, এটা সাধারণ কোনো পরিস্থিতি নয়,” লিখেছে বিবিসি।   

বুধবারের আস্থা ভোটে টিকে গেলে ব্রেক্সিট প্রশ্নে আরেকটি প্রস্তাব আগামী সোমবার সামনে আনার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। তবে সেই প্রস্তাব কেমন হবে- সে বিষয়ে কোনো ধারণা কেউ দিতে পারেননি।

তাতেও যদি এমপিরা মন না বদলান, তাহলে কয়েকটি বিকল্প তার সামনে থাকবে। এর একটি হল ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’। অর্থাৎ, ২৯ মার্চ যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবে, তবে কোনো চুক্তি হবে না।

সেক্ষেত্রে বিচ্ছেদ হবে হুট করেই, বিচ্ছেদ পরবর্তী সম্পর্ক কেমন হবে, ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কর কাঠামো কেমন হবে, কূটনৈতিক সম্পর্কের ধরণই বা কী হবে- সেসব বিষয় অনির্ধারিতই থেকে যাবে।

টেরিজা মে আস্থা ভোটে হেরে গেলে দেখা হবে, তার দল বিকল্প একটি সরকার গঠন করার মত অবস্থায় আছে কি না। সা সম্ভব হলে নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নতুন সরকার গঠন করে ব্রেক্সিটের পুরনো লড়াইয়ে ফিরবে।

আর কনজারভেটিভ পার্টি নতুন কোনো সরকার গঠন করতে না পারলে দেখা হবে বিরোধী দল থেকে কেউ সরকার গঠন করতে পারে কি না। সেক্ষেত্রে নতুন সরকারকে ১৪ দিনের মধ্যে আস্থার প্রমাণ দিতে হবে।

কনজারভেটিভ পার্টির বদলে অন্য কোনো দল সরকার গঠন করলেও একই সমস্যা সামলাতে হবে তাদের, আর সেটা ব্রেক্সিট।

অন্য কোনো দল সরকারে না এলে ২৫ কার্যদিবস পর নতুন একটি সাধারণ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে ব্রিটেনের মানুষকে, যদিও টেরিজা মের বর্তমান সরকারের মেয়াদ ছিল ২০২২ সাল পর্যন্ত। 

সরকারে যারাই আসুক, তারা নতুন প্রস্তাব নিয়ে ইইউর সঙ্গে দর কষাকষিতে যেতে পারে, কিন্তু সেজন্য দরকার সময়। ইইউর দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমা ২৯ মার্চ থেকে আরও বাড়িয়ে নেওয়ার কথাও তারা ভাবতে পারে।

আরও একটি বিকল্প আছে, আর সেটি হল আরেকটি গণভোট। ব্রিটেনের নাগরিকদের কাছে আবারও জানতে চাওয়া হবে- তারা সত্যিই ব্রেক্সিট চান কি না। সেজন্যও ইইউর কাছে বাড়তি সময় চেয়ে নিতে হবে।