ব্রেক্সিটে পরাজয়ের মুখে দাঁড়িয়ে মে

 ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে পার্লামেন্টে তার ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ভোটাভুটিতে পরাজয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।

>>রয়টার্স
Published : 15 Jan 2019, 11:10 AM
Updated : 15 Jan 2019, 01:24 PM

মঙ্গলবারই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে এ চুক্তি নিয়ে ভোট দেবেন এমপি’রা। মে সোমবার এমপি’দেরকে দেশের স্বার্থে চুক্তির পক্ষে ভোট দেওয়া এবং চুক্তিটিতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।

কিন্তু ভোটে বেশিরভাগ এমপি’ই চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। লেবার পার্টি ও  ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের প্রায় সব আইনপ্রণেতাসহ মে’র নিজ দলের প্রায় ১শ’ কনজারভেটিভ এমপি চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ফলে বড় ধরনের পরাজয়ে পড়তে পারেন মে।

আর এরকম হলে মে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) নির্ধারিত সময় (২৯ মার্চ) পিছিয়ে দিতে বাধ্য হতে পারেন। অথবা ব্রেক্সিট নিয়ে আরেকটি গণভোট কিংবা চুক্তি ছাড়া ইইউ ত্যাগসহ নানা বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়ার পট প্রস্তুত হতে পারে।

ব্রেক্সিট নিয়ে হাউজ অব কমন্সে শেষ মুহূর্তের বিতর্ক চলছে। ১৮.৩০ জিএমটি তে একটি ভাষণ দিয়ে মে বিতর্কের ইতি টানবেন। এরপরই প্রায় ১৯ জিএমটি তে শুরু হবে ভোট।

গত নভেম্বরে ব্রেক্সিটমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো ডমিনিক র‌্যাবের মতে, কোনো চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় হয়েছে।

বিবিসি রেডিওকে তিনি বলেন, “যে প্রক্রিয়ায় ব্রেক্সিটের কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং আমরা এই বিষয়ে হাত তুলে বসে থাকবো না; ভোটের মাধ্যমে আমরা এটা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেব, এবার আমাদের পালা।”

ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া নিয়ে গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে যুক্তরাজ্য।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তাদের খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তির নিশ্চিত পরাজয়ের আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী মে এবং ইইউ নেতারা সোমবার খসড়া চুক্তির আপত্তিকর জায়গাগুলোতে রদবদল করার আশ্বাস দিয়েছেন।

কিন্তু তারপরও মে’র চুক্তির বিরোধিতা করা এমপি’দের মন গলেনি। বিবিসি জানায়, সোমবার রাতে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসে চুক্তিটি ৩২১-১৫২ ভোটে বড় ধরনের পরাজয়ের শিকার হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর দল কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপি’র মতে, খসড়া চুক্তিতে ব্রাসেলসের হাতে ‘অতিরিক্ত ক্ষমতা’ তুলে দেওয়া হয়েছে।

যদি এমপিরা তার চুক্তি অনুমোদন না করে তবে মে কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের চাইতে বরং ইইউ’তে থেকে যাওয়াই বেশি পছন্দ করবেন বলে সতর্ক করেছেন।

মে’র সংখ্যালঘু সরকারের শরিক নর্দান আয়ারল্যান্ডের দল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিও ইইউতে থেকে যেতে চাইছে।

পার্লামেন্টে ভোটের ফলাফল তার বিপক্ষে গেলে যুক্তরাজ্যে ভাঙন দেখা দিতে পরে। তাই নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টিকে সতর্ক করে মে বলেন, দল যদি তার বিপক্ষে অবস্থান নেয় তবে বামপন্থি বিরোধী দল লেবার পার্টি পুরো প্রক্রিয়াটি জবরদখল করতে পারে।

বিবিসি জানায়, মঙ্গলবারের ভোটের ফলাফল মে’র বিপক্ষে গেলে আগামী মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের ডাক দিতে পারেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন।

সব মহল থেকে সমালোচনা হলেও মে ইইউর সঙ্গে তার বাণিজ্য বান্ধব ‘ব্রেক্সিট চুক্তি’তে অটল থেকেছেন। বিচ্ছেদের পরও ইইউ’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চান মে, এটি পছন্দ নয় বিরোধীদের।

পরিবেশমন্ত্রী মাইকেল গভ বিবিসি রেডিও ফোর কে বলেছেন, মে’র চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হলে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হতে পারে। যা কিছু সময়ের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। আর এর চেয়েও আরো খারাপ পরিণতি হতে পারে আদৌ কোনো ব্রেক্সিট না হওয়া।