দুই পক্ষই অনড়, ৪র্থ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অচলাবস্থা

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের আংশিক অচলাবস্থা চতুর্থ সপ্তাহে গড়ালেও কোনো পক্ষই ছাড় না দেওয়ায় শিগগিরই সংকট নিরসনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2019, 09:39 AM
Updated : 15 Jan 2019, 09:42 AM

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অর্থায়নকে ঘিরে ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতবিরোধে ডিসেম্বরের ২২ তারিখ থেকে এ অচলাবস্থা শুরু হয়।

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগ থেকেই ট্রাম্প সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। ডেমোক্রেটরা বলছে, জনগণের করের টাকায় তারা প্রেসিডেন্টের প্রতিশ্রুতি পূরণের অযৌক্তিক দাবিতে অনুমোদন দেবে না।

দুই পক্ষের এ অনড় অবস্থানের কারণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের লাখ লাখ কর্মী ২৪ দিন ধরে বেতনহীন অবস্থান দিন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রভাবশালী রিপাবলিকান লিন্ডসে গ্রাহাম চলতি সপ্তাহেই অচলাবস্থার কারণে বন্ধ সরকারি সংস্থা ও বিভাগগুলো সাময়িক সময়ের জন্য খোলার ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে ডেমোক্রেটদের সঙ্গে মধ্যস্থতাকে উৎসাহিত করতে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলে প্রকাশ। কিন্তু সোমবার ট্রাম্প গ্রাহামের এ অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেন। 

“লিন্ডসে এ ধরনের একটি পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। আমি এর সমাধান দেখতে চাই। আমি একে পিছিয়ে দিতে চাই না,” হোয়াইট হাউস থেকে লুইজিয়ানার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।

মেক্সিকো সীমান্তে একটি নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণের লক্ষে চলতি বছর কংগ্রেসের কাছে ৫৭০ কোটি ডলার চেয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতাদের সম্মতি ছাড়া কংগ্রেস এ বরাদ্দ অনুমোদন করতে পারবে না।

ট্রাম্প বলেছেন, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো ধরনের বাজেট বিলে স্বাক্ষর করবেন না। ব্যয় নির্বাহের বাজেট অনুমোদিত না হওয়ায় তহবিল ঘাটতিতে ২২ ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের এক চতুর্থাংশ বিভাগ ও সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

কংগ্রেসের ডেমোক্রেটশাসিত প্রতিনিধি পরিষদ দেয়াল বাদ দিয়ে সীমান্ত সুরক্ষায় ড্রোনসহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মোতায়েনে ১৩০ কোটি ডলার দিতে রাজি হলেও তাতে মন গলেনি ট্রাম্পের। ডেমোক্রেটরা দেয়াল নির্মাণের অর্থ দিতে রাজি না হওয়ায় হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ডেমোক্রেট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটের ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমারের সঙ্গে এক বৈঠক থেকেও তিনি ‘ওয়াক আউট’ করেছেন।     

সোমবার নিউ অরলিয়ন্সে আমেরিকান ফার্ম ব্যুরোর সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতাতেও ট্রাম্প ফের কংগ্রেসের কাছে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়েছেন। বলেছেন, অবৈধ উপায়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া ঠেকাতে দেয়াল যা করতে পারবে, ড্রোন, সেন্সরস ও অন্যান্য টেকনোলজি তার অনেক কিছুই পারবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ এ অচলাবস্থা ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে খ্যাত কৃষকদের ওপরও বড়সড় আঘাত হেনেছে। কৃষি ঋণ ও সহায়তার আবেদনে সাড়া মিলছে না, পাওয়া যাচ্ছে না কৃষি ও শস্য সম্পর্কিত তথ্যের সেবাও।

“আপনি যদি কৃষকদের সাহায্য করতে চান, তাহলে সরকারের কার্যক্রম পুনরায় চালু করুন,” টুইটারে ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে এমনটাই বলেছেন সিনেটের সংখ্যালঘু ডেমোক্রেট অংশের নেতা চাক শুমার।

অচলাবস্থার কারণে বেতন ছাড়া কাজ করে যাওয়া বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের কাজে আসার হার দিন দিন কমে আসছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। অন্যদিকে পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসনের (টিএসএ) বেশিরভাগ কর্মী কাজে হাজিরা দিলেও তহবিল ঘাটতি থাকায় তাদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না।

টিএসএ-র মুখপাত্র মাইকেল বিলেলো সোমবার বলেছেন, দেশব্যাপী তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অনির্ধারিত অনুপস্থিতির হার ৭ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে, বছরখানেক আগে যা ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

“অনেক নিরাপত্তা কর্মকর্তাই বোধগম্য কারণে অন্যান্য কাজের খোঁজ করছেন,” বলেছেন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের চেয়ারম্যান বেনি থম্পসন।

রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ ও এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায় করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মেক্সিকো সরকার এ অর্থ দিতে আপত্তি জানালে ট্রাম্প পরে দেশটির সঙ্গে নতুন করে করতে চাওয়া বাণিজ্য চুক্তি থেকে পাওয়া রাজস্ব কিংবা মার্কিন সামরিক বাহিনীর বরাদ্দ থেকে দেয়াল নির্মাণের খরচ তুলে আনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অর্থের জন্য কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে ‘জরুরি অবস্থা’ জারি এবং সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের তহবিলের অর্থ দেয়াল নির্মাণের কাজে স্থানান্তর করা যায় কি না, গত সপ্তাহে মার্কিন প্রশাসন তাও খতিয়ে দেখছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

তবে তিনি শিগগিরই জরুরি অবস্থা জারির মতো পদক্ষেপ নিতে চান না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।