সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু

সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান দেশটিতে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের এক মুখপাত্র।

>>রয়টার্স
Published : 12 Jan 2019, 09:56 AM
Updated : 12 Jan 2019, 10:34 AM

শুক্রবার কর্নেল সিয়ান রিয়ান বলেন, “সিরিয়া থেকে আমাদের সেনা প্রত্যাহারের ইচ্ছা অনুযায়ী জোট প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে নিরাপত্তার কারণে আমরা নির্দিষ্ট সময়, জায়গা ও সেনাদের চলে যাওয়ার কথা বলতে পারছি না।”

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ায় দায়িত্বরত দুই হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

সিরিয়ায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠা মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গিদল ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) নির্মূল করতে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট সেখানে যুদ্ধ শুরু করে।

সেখানে ‘আইএস পরাজিত হয়েছে’ বলে এক টুইটে দাবি করেন ট্রাম্প। বলেন, “আইএস এর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্যই কেবল সেনাদের সিরিয়ায় রাখা।”

খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা হয়েছে। সেনা প্রত্যাহারের প্রতিবাদে ডিসেম্বরেই পদত্যাগ করেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। দুই সপ্তাহের মাথায় জানুয়ারিতে পেন্টাগনের চিফ অব স্টাফ কেভিন সুয়েনিও পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আইএসর বিরুদ্ধে লড়াইরত দেশটির সরকার বিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট সমর্থন দিচ্ছিল। এমনকি ২০১৭ সালের শুরু দিকে জোট বাহিনী সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা চালিয়েছে।

অন্য দিকে রাশিয়া তাদের মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে গৃহযু্দ্ধে অংশ নিচ্ছে।

রাশিয়ার ধারণা, সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় থাকতে চায়।

ইরাকের যে সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা সিরিয়া যাতায়াত করে ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা সেনা প্রত্যাহারের তেমন কোনো চিত্র এখনো দেথতে পাননি বলে শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দীর্ঘ আট বছর ধরে চলতে থাকা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ভবিষ্যতকে আবারও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ অঞ্চলকে আইএস মুক্ত করতে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) কে সহায়তা করছে। কিন্তু এখনো সেখানে কিছু কিছু জায়গায় আইএস এর উপস্থিতি আছে। ফলে মার্কিন সেনারা চলে গেলে ওই সব অঞ্চলে যে নিরাপত্তা শূন্যতার তৈরি হবে সেটা ঠিক কিভাবে পূরণ হবে তা বোঝা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে সিরিয়ার বিষয়ে তার কথা হয়েছে এবং এরদোয়ান তাকে আইএসর  মূল উৎপাটনের দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কিন্তু এরদোয়ান সরকার আইএসর  বিরুদ্ধে লড়াইরত কুর্দি বাহিনীকেই জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। কুর্দিদের সঙ্গে তুরস্কের সেনাদের দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাসও আছে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোলটন গত মঙ্গলবার বলেছেন, মিত্র কুর্দিদের নিরাপত্তা নিশ্চত না হলে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হবে না।

অন্য দিকে রাশিয়া ও ইরান সমর্থিত সিরিয়ার সরকারি বাহিনীও মার্কিন সেনাদের অনুপস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদ্রোহীগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর দখল নিতে চাইবে।

ফলে সিরিয়ায় নতুন করে ভয়াবহ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।