যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থা

সীমান্ত দেয়ালের বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একগুঁয়েমির জেরে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থায় সৃষ্টি হওয়া অচলাবস্থা অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে।

>>রয়টার্স
Published : 12 Jan 2019, 06:41 AM
Updated : 12 Jan 2019, 06:41 AM

গত ২১ ডিসেম্বর মধ্যরাতের পর থেকে শুরু হওয়া এই অচলাবস্থা শনিবার টানা ২২তম দিনে পড়েছে।

এর আগে ১৯৯৫-৯৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমলে সর্বোচ্চ ২১ দিন অচল ছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য দাবিকৃত ৫৭০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ ছাড়া কোনো অর্থবাজেটে সাক্ষর করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।

অন্যদিকে বিরোধী ডেমোক্রেটিক নিয়ন্ত্রিত যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভের নেতারা ‘জনগণের করের টাকায়’ ট্রাম্পকে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না দেওয়ার ‘প্রতিজ্ঞা’ করেছে।

যদিও ডিসেম্বরের শেষ দিকে যখন এই অবচলাবস্থার শুরু হয় তখন প্রতিনিধি পরিষদ রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন নিম্নকক্ষে ট্রাম্পের দাবি মেনে নিয়ে একটি অর্থবাজেট অনুমোদন পেয়েছিল, যা উচ্চকক্ষ সিনেটে গিয়ে আটকে যায়।

এখন প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ বিরোধীদের হাতে চলে যাওয়ায় আর বিপাকে পড়েছেন ট্রাম্প।

দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের এক-চতুর্থাংশ বিভাগ ও সংস্থার আট লাখের বেশি কর্মী গত ২২ দিন ধরে বেতন পাচ্ছেন না।

কারারক্ষী, বিমানবন্দরকর্মী এবং এফবিআই এজেন্টসহ আরও অনেকগুলো সরকারি সংস্থার কর্মীরা শুক্রবার তাদের নতুন বছরের প্রথম বেতন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা সড়কে নেমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন।

এদিন অনেক সরকারি কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের খালি ‘পে স্লিপ’র ছবি পোস্ট করেছেন।

এমন একজন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র মহাকাশ প্রকৌশলী অস্কার মুরিলো। তিনি টুইটারে তার শূন্য মার্কিন ডলারের চেক পোস্ট করেন লেখেন, “আসলে বাধ্যতামূলক কর্তনের কারণে আমি অর্থ হারিয়েছি।”

বেতন না পাওয়া সরকারি কর্মীদের জন্য শনিবার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি ফুড ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঁচটি পপ-আপ মার্কেট চালু করা হয়েছে।

বেতন দিতে না পারায় নিরাপত্তারক্ষীরা কাজে আসছেন না। যে কারণে ব্যস্ততম মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি পুরো টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য দুই দিন আগে ট্রাম্প শীর্ষ ডেমোক্রেট নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটের সংখ্যালঘু অংশের নেতা চাক শুমার দেয়াল নির্মাণের অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পরপরই ট্রাম্প বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান।

পরে তিনি শীর্ষ দুই ডেমোক্রেট নেতার সঙ্গে বৈঠককে ‘সময় নষ্ট’ হিসেবেও অভিহিত করে বলেন, প্রয়োজনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করবেন।

তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা জরি বরং এর থেকে বের হওয়ার ‘সহজ রাস্তা’। তবে তিনি চান ‘কংগ্রেসেরই এই সমস্যার সামাধান হোক’।

“তবে যদি তারা সেটা না করে..আমি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবো। আমার এটা করার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।”

ট্রাম্প জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে ডেমোক্রেটিক নেতারা তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।