সৌদি তরুণীর আশ্রয়প্রার্থনার আবেদন ‘খতিয়ে দেখা হচ্ছে’

পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ড আসা ১৮ বছর বয়সী সৌদি তরুণীর আশ্রয়প্রার্থনার আবেদন খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2019, 08:37 AM
Updated : 8 Jan 2019, 01:23 PM

ফেরত পাঠালে পরিবারের সদস্যরা খুন করে ফেলবে এই শঙ্কায় রোববার থাইল্যান্ডের বিমানবন্দর থেকে টুইটারে পোস্ট দিয়েছিলেন রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনুন।

তার ওই পোস্ট বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে। থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ তাকে দেশে ঢুকতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে যে দেশ থেকে এ সৌদি নারী এসেছিলেন, সেই কুয়েতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপের মুখে পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

নিজেকে হোটেল কক্ষে আবদ্ধ রেখে রাহাফও তাকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা ব্যাহত করে দেন।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কর্মকর্তারা সোমবার এ সৌদি তরুণীকে বিমানবন্দরের হোটেল থেকে নিজেদের জিম্মায় নেন। থাই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তাকে ব্যাংককের হোটেলে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাটি রাহাফকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তৃতীয় কোনো দেশে তার আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন খতিয়ে দেখা কথা জানিয়েছে বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

“প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। থাই কর্তৃপক্ষ যে তাকে (রাহাফ) ফেরত না পাঠিয়ে সুরক্ষা দিতে রাজি হয়েছেন সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ,” বিবৃতিতে বলেছেন ইউএনএইচসিআরের থাই প্রতিনিধি গুইসেপ্পে দে ভিনসেন্তিস।

পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভ্রমণে থাকার সময় কুয়েত থেকে পালান রাহাফ। থাইল্যান্ড হয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

সৌদি এ তরুণীকে আশ্রয় দিতে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষের প্রতি দেশদুটির সাংসদ ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা আবেদনও জানিয়েছেন। 

তুরস্কের সৌদি কনসুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশুগজিকে হত্যার ঘটনায় চাপে থাকা সৌদি আরবের কট্টর সামাজিক নিয়মকানুনের ওপর রাহাফের ঘটনাটি নতুন করে আলো ফেলে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া নারীরা ভ্রমণ করতে পারেননা। এর মাধ্যমে নারীরা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হাতে জিম্মি হয়ে যান বলে ভাষ্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর।

থাইল্যান্ডের সৌদি দূতাবাস জানিয়েছে, রাহাফকে ফেরত পাঠাতে তারা থাই কর্তৃপক্ষের কাছে কোনোই আবেদন জানায়নি।

“সৌদি আরব তাকে বহিঃসমর্পণে অনুরোধ জানায়নি। দূতাবাস একে পারিবারিক বিষয় হিসেবেই দেখছে,” টুইটারে এক পোস্টে জানিয়েছে তারা।

যদিও সোমবার থাই অভিবাসন পুলিশের প্রধান সুরাচাত হাকপার্ন ১৮ বছর বয়সী এ তরুণীর বিষয়ে সৌদি দূতাবাস তাদের সতর্ক করেছিল বলে জানিয়েছিলেন।

দূতাবাস বলেছিল রাহাফ পরিবার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, এবং তারা তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, জানিয়েছিলেন হাকপার্ন।

অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তারা সৌদি তরুণীর ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

“সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হলে ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে, রাহাফ আল-কুনুনের এ দাবি গভীর উদ্বেগজনক,” বিবৃতিতে বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগের এক মুখপাত্র।

রাহাফকে আশ্রয় দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে টুইটারে পোস্ট দিয়েছেন দেশটির সিনেটর সারাহ হ্যানসন-ইয়ং। 

সৌদি এ নারীকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেরেমি হান্টকে অনুরোধ জানিয়ে দেশটির এক নারীর করা অনলাইন পিটিশনে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই হাজারেরও বেশি স্বাক্ষর পড়েছে।