হংকংয়ে বাংলাদেশি তরুণীর সাফল্য

মাত্র ২০ বছর বয়সে হংকংয়ের আইন পরিষদে সহযোগী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে নজর কেড়েছেন বাংলাদেশি তরুণী বকর ফারিহা সালমা দিয়া; ‍যিনি একদিন সেখানকার আইনপ্রণেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2019, 02:45 PM
Updated : 6 Jan 2019, 11:07 AM

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফারিহা বলেন, “আমি সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে এসেছি এবং আমার বয়স মাত্র ২০, এটা দেখে আমার সহকর্মীরা হতবাক হয়ে গিয়েছিল।”

ভিনদেশের মানুষদের হংকংয়ের মূলস্রোতের অংশ হতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। বাণিজ্য নগরীটিতে যারা সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচিত হন। স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে বাসাভাড়া, চাকরি সব ক্ষেত্রেই তাদের নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়।

এই বাধা টপকাতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ফারিহা হংকংয়ের প্রধান ভাষা ক্যান্টোনিস শেখাকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেন। ক্যান্টোনিস ছাড়াও তিনি একাধারে মান্দারিন, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি ও ফিলিপিনো (তাগালগ) ভাষায় পারদর্শী।

ফারিহার জন্ম হংকংয়ে, ২৫ বছর আগে তার বাবা চাকরি সূত্রে পরিবার নিয়ে হংকংয়ে পাড়ি জমান এবং সন্তানদের উন্নত জীবন দিতে সেখানেই বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন।

বাবা-মার সঙ্গে ফারিহা কাউলুনের ইয়উ মা তেইয়ের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন, তার ১৫ বছরে একটি ভাই আছে।

ফারিহা স্বপ্ন দেখেন, একদিন তিনি হংকংয়ের আইনপ্রণেতা হবেন।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে তিনি বলেন, “আমি সরকার ব্যবস্থায় আরও বেশি সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ দেখতে চাই। আমি চাই হংকংয়ে সংখ্যালঘুরা আরও উন্নত জীবন পাক।”

সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফারিহা এরইমধ্যে নিজের স্বপ্ন পূরণের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি আইন পরিষদের একজন সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। হংকংয়ের আইন পরিষদে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা।

দুই বছর বয়স থেকে ফারিহা হংকংয়ের প্রধান ভাষা ক্যান্টোনিস শেখা শুরু করেন এবং তিনি স্থানীয়দের মত ক্যান্টোনিস ভাষায় পারদর্শী।

ছবি : ফেইসবুক থেকে নেওয়া

ক্যান্টোনিস ভাষার উপর দক্ষতাই হংকংয়ে তার জীবন এবং ক্যারিয়ার গঠন সহজ করে দিয়েছে বলে মনে করেন ফারিহা। বলেন, “ক্যান্টোনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমি এই ভাষায় দক্ষ না হতাম তবে ডিগ্রি থাকার পরও চাকরি পেতে আমাকে অনেক বাধার মুখে পড়তে হত।

“ক্যান্টোনিস ভাষা হংকংয়ের সংস্কৃতির অংশ। এখানে বসবাস করতে এর গুরুত্ব অপরিসীম।”

স্কুলে অন্যান্য ভাষাভাষীর শিক্ষার্থীরা যখন ক্যান্টোনিস ভাষা শিক্ষাকে সহপাঠ হিসেবে নিয়েছে তখন ফারিহা সেটিকে প্রধান বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ক্যান্টোনিসে দক্ষতা বাড়াতে পড়াশুনার বাইরে তিনি নিয়মিত খবরের কাগজ পড়তেন এবং ক্যান্টোনিস ভাষার নাটক দেখতেন।

তার এই প্রচেষ্টা একসময় ফল দিতে শুরু করে। ফারিহা খুব সহজেই স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে মিশে যেতে শুরু করেন। তার বন্ধুদের ৯০ শতাংশই স্থানীয়।

“যদি আমি ক্যান্টোনিস না শিখতাম তবে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না।”

হংকংয়ে জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের জন্য। এক্ষেত্রে ফারিহা নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন।

“আমার ভাগ্য ভালো, আমি হংকংয়ে সুখে আছি। কিন্তু আমার চারপাশের সবার জন্য বিষয়টা এত সহজ নয়। তাদের অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়। এমনকি কিন্টারগার্টেনে ভর্তি বা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা বা বাসা ভাড়া পেতেও সংখ্যালঘুদের এখানে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়।”

ছবি : ফেইসবুক থেকে নেওয়া

বাড়িওলারা অন্য দেশ থেকে আসা লোকদের ভাড়া দিতে চায় না বিধায় পাকিস্তান থেকে আসা তার এক বন্ধু বাড়ি ভাড়া পাচ্ছে না বলেও জানান ফারিহা।

গৃহকর্মী বাদে হংকংয়ে প্রায় পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার সংখ্যালঘু মানুষ বাসবাস করে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ।

ফারিহা চান সংখ্যালঘুরাও স্থানীয়দের মত ন্যায্য ও সমান সুযোগ পাক। এই লক্ষ্যে কাজ করতে চান জানিয়ে বলেন, “এটাই আমাকে আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা দেয়।”

গত মার্চে ‘ডাইভারসিটি লিস্ট’ এ সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত হন ফারিহা। একটি সম্মেলনে তার দেওয়া বক্তৃতা তার বর্তমান বস হংকংয়ের আইনপ্রণেতা ডেনিস কোক উইং-হাংয়ের নজর কাড়েন।

ফারিহাকে নিজের সহযোগী হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেন কোক। গত অগাস্ট থেকে সপ্তাহে তিন দিন ১০টা-৬টা কোকের কার্যালয়ে কাজ করছেন ফারিহা।

কিভাবে নিজের পড়াশুনা এবং চাকরির মধ্যে সমন্বয় করেন জানতে চাইলে ফারিহা বলেন, “প্রচণ্ড আগ্রহ থেকে আমি এটা করছি। আমার মতে, যথেষ্ট সময় নেই বলে কিছু হয় না। উদাহরণ হিসেবে বললে, যদি আপনি বিছানায় শুয়ে ফোন ঘাঁটাঘাঁটির সময় পান, তবে এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থপূর্ণ কাজ করার সময় আপনার হাতে আছে।”

নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে ফারিহা বলেন, “যখন কেউ আমাকে আমার লক্ষ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে আমি বলি, হংকংকে সংখ্যালঘুদের জন্য আরও সুন্দর জায়গা বানাতে আমি আইন পরিষদের একজন সদস্য হতে চাই।”