নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশের সাহসিকতার ভিডিও ভাইরাল

ম্যানহাটনের সাবওয়েতে লাঠি হাতে পাঁচ দুর্বৃত্তকে মোকাবেলা করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2018, 09:27 AM
Updated : 27 Dec 2018, 09:53 AM

রোববার রাতে পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আলীর সঙ্গে ওই পাঁচ দুর্বৃত্তের মারামারির একটি ভিডিও অনলাইনেও ভাইরাল হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লাখ লাখ ব্যবহারকারীর পাশাপাশি নিউ ইয়র্কের মেয়র, সাবেক পুলিশ কমিশনার ও কাউন্সিলররাও তাকে অভিবাদন জানিয়েছেন বলে খবর নিউ ইয়র্ক টাইমসের।

আলী জানান, রোববার রাতে ইস্ট ব্রডওয়ে সাবওয়ে স্টেশনের লোয়ার ইস্ট সাইডে এক নারী এসে তাকে একদল বখাটে বিরক্ত করছে বলে জানান।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ পুলিশ কর্মকর্তা তৎক্ষণাৎ ওই বখাটে দলকে স্টেশন এলাকা ছেড়ে যেতে বললে তারা মারমুখী হয়ে ওঠে।

এরপর কয়েক দফা আলীর ওপর তারা হামলার চেষ্টা চালালেও অসীম দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করেন ইরাকে মার্কিন সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করে পদক পাওয়া এ অভিজ্ঞ যোদ্ধা। 

ঘটনার সময় এক পথচারী এ মারামারির দৃশ্য ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। রাতের মধ্যেই তা লাখ লাখ মার্কিনির পছন্দের তালিকায় শীর্ষে চলে আসে।

অনলাইনে ওই ভিডিওর খবর জানতেন না আলী। সোমবার ভোরে এক সহকর্মী ভিডিওটি এবং এর ভাইরাল হওয়ার কথা জানান।

“হলি কাউ, এটা কি?,” ভিডিওটি দেখার পর প্রথম অভিব্যক্তি এ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের।

তিনি জানান, ঘটনার সময় উত্তেজনা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় কী কী করেছিলেন সবটা তার মনেও ছিল না। ভিডিও দেখে নতুন করে তা স্মরণ হয়েছে।

 

৩৫ বছর বয়সী আলীকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো।

মঙ্গলবার টুইটারে তিনি লিখেছেন, “কী অসাধারণ পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতা দেখিয়েছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা সৈয়দ আলী।”

ব্রুকলিনের ডেমোক্রেট কাউন্সিলম্যান চেইম এম ডয়েচ দিয়েছেন পেশাদারিত্বের সনদ। ‘পরিস্থিতি মোকাবেলায় সুস্থির ও শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণের’ জন্য আলীকে ধন্যবাদও দিয়েছেন তিনি।

অবশ্য এবারই প্রথম নয়। জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয়ে গতবছরও অনলাইনে আলোচিত হয়েছিলেন তিন বছর বয়সে বাবা-মার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসা আলী।

কুইনসের উডসাইডে বেড়ে ওঠা এ মুসলিম বয়স ১৮ হওয়ার আগেই নাম লেখান নৌবাহিনীতে। কলেজের পাঠ চুকিয়ে ঢুকে পড়েন সেনাবাহিনীতে।

২০০৮ সালে ইরাক অভিযানে কৃতিত্ব রাখায় ‘কমব্যাট অ্যাকশন ব্যাজও’ পেয়েছেন তিনি।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সামরিক বাহিনীর হয়ে দুই বছর কুয়েতে কাজ করার পর গত বছরের শুরুর দিকে ছুটির অংশ হিসেবেই ইস্তাম্বুলে গিয়েছিলেন আলী। সেখান থেকে ফিরেই বিমানবন্দরে শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর হয়রানির শিকার হন।

মার্কিন নাগরিক, যুদ্ধ ফেরত কর্মকর্তা হওয়ার পরও পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখার কথা বলে আলীকে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় বিমানবন্দরে বসিয়ে রাখা হয়; এ নিয়ে কথা বলতে গেলে কর্মকর্তারা তাকে আটক করারও হুমকি দেন।

হোয়াইট হাউসে বসেই ট্রাম্প ছয় মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আলী ছাড়াও আরও অনেক মার্কিনিকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

“আমি জানি আমার নামের শেষাংশের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন কিছু লোক আছে যারা ক্ষতিকর কাজ করতে পারে। তাই বলে যাদের নামের শেষে আলী আছে তারা সবাই সন্ত্রাসী? বিদেশ থেকে আসা বাদামী চামড়ার সবাই সন্ত্রাসী?” এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন তিনি।

রোববার ম্যানহাটনের সাবওয়েতে দুর্বৃত্তদের মোকাবেলায় সেনাবাহিনী থেকে পাওয়া প্রশিক্ষণই কাজে লেগেছে বলেও নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

আলীর ওপর হামলা করা ব্যক্তিদের পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় চিকিৎসা শেষে সেসময় তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়।

পরেরদিন একই সাবস্টেশনে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তাদের আটক করা হয়। পুলিশ বলছে, আটক করার সময় এ ব্যক্তিরাই যে আগেরদিন পুলিশ কর্মকর্তার ওপর চড়াও হয়েছিল ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি কার্যালয় তা জানত না।

আটকদের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে দাঙ্গা সৃষ্টি, সরকারি কাজে বাধা, হামলার চেষ্টাসহ বেশ কয়েকটি অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে।