বুধবার আদালতে শুনানির জন্য হাজির করা হয় ওয়াংকে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার এ বিচারকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়েছে।
বিরোধী মত দমনে ২০১৫ সালে চীন সরকারের অভিযানে নিখোঁজ হওয়া শতাধিক আইনজীবীর মধ্যে একজন ওয়াং।
তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি চীনের নিষিদ্ধ ঘোষিত আধ্যাত্মিক আন্দোলন ‘ফালুন গং’ এর অনুসারীদের পক্ষে কাজ করতেন। সুইডেনের মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গেও কাজ করতেন তিনি।
বিবিসি জানায়, বুধবার কড়া নিরাপত্তায় উত্তরের নগরী তিয়ানজিনের একটি আদালতে ওয়াংয়ের মামলার শুনানি হয়েছে। তবে কোনো রায় ঘোষণা হয়নি। ওই সময় তার অনেক সমর্থক আদালত প্রাঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৫ সালে ওয়াংকে গ্রেপ্তারের পর তার সঙ্গে আর দেখা করতে পারেননি জানিয়ে স্ত্রী লি ওয়েনজু বলেন, পুলিশ বেইজিংয়ে তাদের বাড়িটি ঘিরে রেখেছে। এমনকি তাকে আদালতে উপস্থিত থাকতেও দেওয়া হচ্ছে না। সাংবাদিক এবং বিদেশি কূটনীতিকদেরও আদালতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
ওয়াংকে আনার আগে আদালতের সামনে তার সমর্থকরা জড় হয়ে মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেয়। তাদের কারো কারো হাতে প্ল্যাকার্ডও ছিল। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতের নথি অনুযায়ী, তিনি সুইডেনের এক মানবাধিকারকর্মী এবং অন্যান্যদের সঙ্গে মিলে ‘বিদ্রোহী বাহিনীর প্রশিক্ষণে’ কাজ করেছেন।
সুইডিশ ওই কর্মীকে এ বছর জানুয়ারিতে তিন সপ্তাহ আটকে রেখে পরে চীন থেকে বিতাড়িত করা হয়। তিনি একটি আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
তিনি বলেন, ওয়াং তার প্রতিষ্ঠানের হয়ে যেসব কাজ করেছেন তার সব নথিপত্র তিনি নিজের কাছে গুছিয়ে রেখেছেন। “ওয়াং রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করেননি, সেটা প্রমাণে প্রয়োজনে আমি সেসব প্রকাশ করব।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক ডোরিয়ান লাউ চীনা আইনজীবী ওয়াংকে গ্রেপ্তার ও তার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা করে বলেছেন, “চীন কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই এমন সময়ে বিচার কাজ শুরু করেছে যখন বড়দিন ও নববর্ষ উদযাপন করতে পুরো বিশ্ব ছুটির আমেজে আছে এবং এখন এই বিচারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিক্রিয়া জানাবে না।”
বিরোধীমত দমনে চীন সরকারেরি অভিযান ‘৭০৯’ নামে পরিচিত। ২০১৫ সালের ৯ জুলাই যা শুরু হয়েছিল।
ওই অভিযানে আইনজীবীসহ দুই শতাধিক মানুষকে আটক করা হয়। তাদের অনেকেই এখন কারাগারে আছেন বা গৃহবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
এরকম চারজন আইনজীবীকে ‘বিনা বিচারে বন্দি’ এবং তাদের মুক্তির দাবিতে গত ১৭ ডিসেম্বর তাদের স্ত্রীরা মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।