জুলাইয়ে বাণিজ্যিক তিমি শিকার শুরুর ঘোষণা জাপানের

জাপান আগামী বছরের জুলাই থেকে বাণিজ্যিকভাবে তিমি শিকার শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক তিমি কমিশন (আইডব্লিউসি) থেকে সরে গিয়ে এ শিকারে নামবে তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2018, 09:17 AM
Updated : 26 Dec 2018, 12:20 PM

বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে বিপন্ন হয়ে পড়া তিমির বাণিজ্যিক শিকার শুরুর এ ঘোষণা দিয়ে জাপান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

বিলুপ্তির পথে থাকা তিমির বেশ কয়েকটি প্রজাতি বাঁচাতে ১৯৮৬ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক তিমি শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আইডব্লিউসি। ১৯৫১ সাল থেকে সংস্থাটির সদস্য জাপান এখন বলছে, তিমি খাওয়া তাদের সংস্কৃতির অংশ।

জাপান দীর্ঘদিন ধরে ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা’র নামে বছরে ২০০ থেকে ১২০০ তিমি শিকারের সুযোগ পেয়ে আসছিল; শিকার করা তিমির মাংসও বিক্রি করতে পারত তারা। এ কর্মসূচি নিয়ে সংরক্ষণবাদীদের তীব্র সমালোচনাও ছিল।

দেশটি যে ফের বাণিজ্যিকভাবে তিমি শিকারের পথে যাবে তা আগেই জানিয়েছিল। এখন তারা সে সিদ্ধান্তই ঘোষণা করল। কিন্তু এ পদক্ষেপ সমুদ্রের বাস্তুসংস্থান ও তিমির নানা প্রজাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসবে বলে শঙ্কা প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার।

বুধবারের এ ঘোষণার ফলে জাপান আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকে মিঙ্কি তিমিসহ আইডব্লিসি যেসব প্রজাতির সংরক্ষণে কাজ করছে সেগুলোও অবাধে শিকার করতে পারবে।

দেশটির সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, তারা জাপানের নিয়ন্ত্রণে থাকা সমুদ্রসীমা ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বাণিজ্যিক তিমি শিকার সীমাবদ্ধ রাখবেন।

এর ফলে অ্যান্টার্কটিকা ও দক্ষিণ গোলার্ধের জলসীমায় তিমি শিকার বন্ধ করবে জাপান, আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করার আগেই এ প্রত্যাশাকে স্বাগত জানিয়েছে সংরক্ষণবাদী গোষ্ঠীগুলো।

এক বিবৃতিতে জাপান সরকার জানিয়েছে, আইডব্লিউসি নিজেদের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ‘টেকসই বাণিজ্যিক তিমি শিকারে সহযোগিতার’ প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে তৎপর নয়। সংস্থাটি কেবল তিমির সংখ্যা সংরক্ষণেই মনোযোগী বলেও অভিযোগ তাদের।

জাপানের উপকূলীয় বিভিন্ন সম্প্রদায় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তিমি শিকার করে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটিতে মাংসের আকাল দেখা দিলে তিমির মাংসের চাহিদাও বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবশ্য এ চাহিদা অনেকটাই কমে এসেছে।

জাপানের সংবাদমাধ্যম আসাহি বলছে, এখন দেশটিতে যে পরিমাণ মাংস বিক্রি হয় তার মাত্র শূন্য দশমিক এক শতাংশ আসে তিমি থেকে।

জাপানের ফের বাণিজ্যিক তিমি শিকারের ঘোষণায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস পেইন ও পরিবেশ মন্ত্রী মেলিসা প্রাইস এক যুক্ত বিবৃতিতে টোকিওর সিদ্ধান্তে ‘গভীর হতাশা’ জানিয়েছেন।

“অস্ট্রেলিয়া সব ধরণের বাণিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনে তিমি শিকারের বিরোধিতা করে যাবে,” বলেছেন তারা।

দেশের ভেতরেও এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে জাপানের সরকার। সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে গ্রিনপিস জাপান।

আগামী বছরের জুনে জাপানে অনুষ্ঠেয় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জি-২০ সম্মেলনে টোকিও এ সিদ্ধান্তের কারণে অন্য দেশগুলোর কড়া সমালোচনার ঝুঁকিতে পড়ল বলেও মন্তব্য তাদের।