মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অর্থায়নকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকারের আংশিক অচলাবস্থার তৃতীয় দিনে সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে একের পর এক হতাশা ঝেড়েছেন বলে এনডিটিভিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এসব টুইটে তিনি বলেছেন, “ডেমোক্রেটরা ভণ্ড। গণমাধ্যম মিথ্যা গল্প বানায়। বিদেশ নীতি নিয়ে ভুল করেন সিনেটররা, এমনকী প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসও।”
তুরস্কের সৌদি কনসুলেটের ভেতর সাংবাদিক জামাল খাশুগজি খুনে মার্কিন সিনেট সর্বসম্মতিক্রমে ক্রাউন প্রিন্সকে দায়ী করার দুই সপ্তাহ পর এদিন এক টুইটে ট্রাম্প যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া পুনর্গঠনের দায়িত্ব রিয়াদের হাতে সঁপে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
“সৌদি আরবকে ধন্যবাদ,” বলেছেন তিনি।
বড়দিনের ছুটির আগে বন্ধ হওয়া মার্কিন শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি ১৯৩১ এর ডিসেম্বরের পর সবচেয়ে খারাপ হওয়ার জন্য ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে দায় দিয়েছেন।
এসব টুইটই তিনি করেছেন সোমবার দুপুরের আগে; মিথস্ক্রিয়া, সমালোচনা ও প্রশংসায় সিদ্ধহস্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্ট থেকে এরপর স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩২ মিনিটে আসে দিনের ১০ম টুইট, তাতেই জানান ‘একাকীত্বের’ কথা।
লেখেন, “হোয়াইট হাউসে একেবারেই একা (দুর্ভাগা) হয়ে খুবই প্রয়োজনীয় সীমান্ত সুরক্ষার ব্যাপারে চুক্তি করতে ডেমোক্রেটদের ফিরে আসার অপেক্ষায় বসে আছি।”
সোমবার হোয়াইট হাউসে ‘কার্যত’ একাই ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বড়দিনের ছুটিতে ক্যাপিটল হিলের বেশিরভাগ আইপ্রণেতাই বাড়ি চলে গেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ক্রিসমাসের ছুটি কাটাতে চলে গেছেন কয়েক মাইল দূরের নাভাল অবজারভেটরির বাসভবনে।
ফ্লোরিডার মার-আ-লগো থেকে অবশ্য সোমবারই ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরে এসেছেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।
তবে ট্রাম্পের টুইটে মূলত নিজ দলের সিনেটরদের সঙ্গে দূরত্বের পাশাপাশি আসছে বছরের দুশ্চিন্তাগুলোই ফুটে উঠেছে।
জানুয়ারিতে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের দায়িত্ব ফিরে পেলে ডেমোক্রেটরা ট্রাম্প প্রশাসনের দুর্নীতি ও প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত খরচের দিকে নজর দেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে।
সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে রিপাবলিকান পার্টি ও মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও দূরত্ব বেড়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচকদের বিরুদ্ধে কথার তুবড়ি ছোটানো এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট সোমবার এমন এক সময়ে একের পর এক ক্ষোভ আর হতাশা উগরে দিয়েছেন, যখন বেশিরভাগ মার্কিনিই পরিবারের সঙ্গে বড়দিনের উৎসবে ব্যস্ত।
সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের এসব টুইট এমন একজন জনবিচ্ছিন্ন নেতার চিত্র সামনে হাজির করছে যার ‘গভীর জখমের শুশ্রূষা’ প্রয়োজন।
“এটি একটি হারিয়ে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত আত্মার ছবি। বিচ্ছিন্ন ও একাকী প্রেসিডেন্টের দুঃখজনক ও গ্লানিকর কিছুর ছবি,” বলেছেন আগের তিনটি রিপাবলিকান প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করা পিটার ওয়েনার।
ট্রাম্পের টুইট বিষয়ে হোয়াইট হাউসের কোনো কর্মকর্তারা মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট অবশ্য হতাশা দিয়ে টুইটারে তার সোমবারের কার্যক্রম শেষ করেননি। শেষ দিকে এসে গেয়েছেন নিজের জয়গান, ঘোষণা করেছেন তার প্রশাসনের বিজয়গাঁথাও।
নির্বাচনী প্রচারণায় দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বড় হাতের সব অক্ষরে লিখেছেন, “আমেরিকা ইজ রেসপেক্টেড অ্যাগেইন।”