সিরিয়া: মার্কিন সেনা ফেরানোর সিদ্ধান্তে অপ্রস্তুত মিত্ররা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সব সৈন্য ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2018, 10:00 AM
Updated : 20 Dec 2018, 10:00 AM

বুধবার মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে সম্পূর্ণ পরাজিত করা হয়েছে দাবি করে সৈন্য ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

কিন্তু তার এ দাবির সঙ্গে জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান নেতাদের পাশাপাশি অনেক মিত্র দেশও একমত নয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার আইএসের পুনরুত্থান ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকা থেকে জিহাদি এ গোষ্ঠীকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তদের সমর্থিত বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ওই অঞ্চলের বেশ কিছু পকেটে এখনো আইএসের যোদ্ধারা সক্রিয়।

রিপাবলিকান পার্টিতে ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ট্রাম্পের সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়েছেন।

একে ‘ওবামার বড় ধরনের ভুলের মতো’ বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ফলে সিরিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের ‘বিধ্বংসী পরিণতি’ হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন মার্কিন সিনেটের আর্মড সার্ভিস কমিটির এ সদস্য।

ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে ওই অঞ্চলে ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব বাড়বে বলেও আশঙ্কা তার।

“এই সময়ে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ইসলামিক স্টেট, ইরান, সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ ও রাশিয়াকে বড় ধরনের জয় এনে দেবে,” বলেছেন গ্রাহাম। 

অন্যদিকে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, আইএস পুরোপুরি পরাজিত হয়েছে ট্রাম্পের এ দাবির সঙ্গে একমত নয় তারা।

“অনেকখানিই সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু আমাদের উচিত হবে না যে হুমকি তারা জারি রেখেছে তা থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া,” এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর।

পেন্টাগন বলছে, সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের পর তারা আইএস নির্মূলে ‘পরবর্তী পর্যায়ের অভিযান’ শুরু করবে, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি তারা।

দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা ট্রাম্প বুধবার টুইটারে বলেন, ‘ঐতিহাসিক বিজয়ের’ পর এখন তাদের (মার্কিন সেনা) ঘরে ফিরিয়ে আনার সময় হয়েছে।

কতদিনের মধ্যে ওই সৈন্যদের ফিরিয়ে আনা হবে হোয়াইট হাউস সে বিষয়ে কোনো সময়সূচি না দিলেও সামরিক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৩০ দিনের মধ্যেই সৈন্যদের ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল।

সৈন্য ফিরিয়ে নিলেও ‘ভিন্ন উপায়ে এ অঞ্চলে প্রভাব ধরে রাখা হবে’ বলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের জানিয়েছে, ভাষ্য তেল আবিবের।

“তাদের (সেনা প্রত্যাহারের) সময়সূচি, কীভাবে করা হবে এবং এর ফলে আমাদের ওপর কী প্রভাব পড়বে তা খতিয়ে দেখা হবে,” বলেছে ইসরায়েল।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

মার্কিন সিদ্ধান্ত সিরিয়ায় ‘সত্যিকারের সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক সমাধানের’ দ্বার খুলতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

সিরিয়ায় বর্তমানে স্বল্প সংখ্যক মার্কিন সৈন্য আছে। দেশটির উত্তরাংশে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে এ হাজার দুয়েক সেনার অবস্থান বলে জানিয়েছে বিবিসি।

কুর্দি ও আরব যোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) সহায়ক শক্তি হিসেবে ওই সেনারা সেখানে অবস্থান করছেন।

সিরিয়ার বিশাল অংশ নিয়ে চার বছর আগে গঠিত আইএসের খিলাফত উচ্ছেদে এই এসডিএফ গুরুত্বপূর্ণ পালন করেছে। ট্রাম্পের সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে এসডিএফও বিস্মিত। 

উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কুর্দি নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র আলদার জেলিল বলছেন, “কেউই সেনা প্রত্যাহারের বিস্তারিত সম্পর্কে পরিষ্কার নন, এমনকী এখানকার মার্কিন কমান্ডাররাও এ বিষয়ে কিছু জানেন না।”

মার্কিন সিদ্ধান্ত পুরো অঞ্চলেই বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে, রোনাহি টিভিকে দেওয়া মন্তব্যে এমনটাই বলেছেন এ কুর্দি মুখপাত্র।

সিরিয়ায় এখনো ১৪ হাজারের মতো আইএস যোদ্ধা আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও জানানো হয়েছিল। পার্শ্ববর্তী ইরাকে এ সংখ্যা আরও বেশি বলেও এতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

নিজেদের নেটওয়ার্ক বিস্তারে জঙ্গি এ গোষ্ঠীটি গেরিলা কৌশল অবলম্বন করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছিল।

বিবিসি বলছে, সিরিয়ায় কুর্দিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা তুরস্ককে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল।

আঙ্কারার নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীনতা চাওয়া কুর্দিদের সঙ্গে এসডিএফে ক্রিয়াশীল ওয়াইপিজে মিলিশিয়া বাহিনীর ঘনিষ্ঠ যোগযোগ আছে বলে দাবি করে আসছে তুরস্ক।

সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান শিগগিরই সিরিয়ার ওয়াইপিজে গেরিলাদের বিরুদ্ধে নতুন অভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছেন, তিনি তার পরিকল্পনা ফোনে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন; ট্রাম্প এতে ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছেন বলেও দাবি তার।