বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল বারবারা আন্ডারউড মঙ্গলবার ট্রাম্প ফাউন্ডেশন বন্ধের ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান। ফাউন্ডেশনের হাতে এখন যে অর্থ আছে তা অ্যাটর্নি জেনারেলের তত্ত্বাবধানেই অন্য দাতব্য সংস্থাকে দিয়ে দেওয়া হবে।
ট্রাম্প ও তার তিন সন্তান ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে ওই ফাউন্ডেশনের অর্থ বেআইনিভাবে ব্যবহার করেছিলেন অভিযোগ করে গত জুনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর।
অন্যদিকে ট্রাম্প ফাউন্ডেশনের আইনজীবী বলে আসছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ বিষয়টিকে রাজনৈতিক চেহারা দিতে চাইছেন।
আন্ডারউড মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ফাউন্ডেশন বন্ধ হয়ে গেলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার মেয়ে ইভাঙ্কা, ছেলে ডোনাল্ড জুনিয়র ও এরিকের বিরুদ্ধে মামলা চলেবে।
“যে পরিমাণ অনিয়ম ও অবৈধ কাজ ওই ফাউন্ডেশনের নামে হয়েছে তা অবাক করার মত। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে অবৈধভাবে ফাউন্ডেশনকে জড়ানো হয়েছে। অবৈধভাবে নিজেদের মধ্যে অর্থের হাতবদল হয়েছে বার বার। সবকিছু দেখলে মনে হয়, ওই ফাউন্ডেশন আসলে ট্রাম্পের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থের একটি চেকবই ছাড়া আর কিছু ছিল না।”
ট্রাম্প তার বহুল বিক্রিত বই ‘দি আর্ট অব দি ডিল’ বিক্রির টাকায় ১৯৮৭ সালে নিজের নামে এই দাতব্য প্রতিষ্ঠান খোলেন। ২০০৫ সালের পর থেকে এই ফাউন্ডেশন ট্রাম্পের বন্ধু আর সহযোগীদের কাছ থেকেও তহবিল নিতে শুরু করে।
এ ফাউন্ডেশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালিত হত ট্রাম্পের স্বাক্ষরে, অনুদান ছাড় করার ক্ষমতাও কেবল তার হাতেই ছিল। তবে ২০০৮ সালের পর নিজের পকেট থেকে আর কোনো টাকা ওই ফাউন্ডেশনে দেননি নিউ ইয়র্কের এই ধনকুবের।
২০১৪ সালে এ ফাউন্ডেশনের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৯৫ ডলার, যার মধ্য ৫ লাখের বেশি এসেছিল নিউ ইয়র্কের টিকেট-রেসলিং মুঘল রিচার্ড ইবরেসের দান থেকে। ওই সময় পর্যন্ত ফাউন্ডেশন বিতরণ করেছিল ৬ লাখ ৯১ হাজার ৪৫০ ডলার।
২০১৩ সালে ফ্লোরিডার অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির একটি অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর রিপাবলিকান নেতা বন্ডির সমর্থক একটি গ্রুপকে ২৫ হাজার ডলার অনুদান দিয়েছিল ট্রাম্প ফাউন্ডেশন। ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সেই তদন্ত আর হয়নি।
ওই বিষয়টি নিয়ে ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়। ফাউন্ডেশনের নিবন্ধনেও অনিয়ম থাকার কথা জানিয়ে ওই বছর অক্টোবরে টাকা তোলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক স্নেইডারম্যান।
দুই বছর তদন্ত শেষে ট্রাম্প ও তার তিন সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করে নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর।
সাবেক প্রেমিকাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠায় তার এক মাস আগেই স্নেইডারম্যান পদত্যাগ করেন এবং আন্ডারউড সেই দায়িত্ব নেন।
মামলা করার পর আন্ডারউড বলেছিলেন, ওই ফাউন্ডেশনের টাকা ট্রাম্পের নির্দেশেই তার নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা হয়েছিল। পাশাপাশি ট্রাম্পের মামলা চালানোর খরচ, ব্যবসা সম্প্রসারণসহ ব্যক্তিগত কেনাকাটার কাজেও ওই তহবিল থেকে টানা নেওয়া হয়েছিল।
‘স্বার্থের সংঘাত’ এড়াতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দাতব্য সংস্থাটি বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু তদন্ত শেষের আগে ওই ফাউন্ডেশন বন্ধের সুযোগ নেই বলে সে সময় জানানো হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর থেকে।