কানাডীয় ব্যবসায়ী স্পেভর চীনে ‘নিখোঁজ’

সাবেক কূটনীতিক মাইকেল কভরিগের পর কানাডার আরও এক নাগরিক চীনে আটক হয়েছেন বলে আশঙ্কা করছে অটোয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2018, 09:33 AM
Updated : 13 Dec 2018, 12:21 PM

জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগে বেইজিং ব্যবসায়ী মাইকেল স্পেভরকে আটক করে থাকতে পারে, সন্দেহ কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

‘নিখোঁজ’ এ কানাডীয়র সঙ্গে যোগাযোগের জোর চেষ্টা চলছে বলেও বুধবার মন্ত্রণালয়টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বলে খবর বিবিসির।

চীন এর আগে গত সপ্তাহে কানাডার সাবেক কূটনীতিক মাইকেল কভরিগকে আটক করার কথা জানিয়েছিল।

টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝৌকে গ্রেপ্তারের বদলায় বেইজিং এ দুইজনকে আটক করেছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

গত ১ ডিসেম্বর ভ্যাঙ্কুভারে বিমান পরিবর্তনের সময় কানাডীয় কর্তৃপক্ষ মেংকে গ্রেপ্তার করে।

হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতার এ মেয়ের বিরুদ্ধে বহুজাতিক বিভিন্ন ব্যাংককে ইরানের সঙ্গে লেনদেন বিষয়ে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেছে ওয়াশিংটন। ওইসব ভুল তথ্যের জন্য ব্যাংকগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ইরান নিষেধাজ্ঞা লংঘন ও বিশাল অংকের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

মেংকে হস্তান্তরে আদালত সম্মতি দিলে হুয়াওয়ের এ শীর্ষ নির্বাহীকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে কিনা সে বিষয়ে কানাডার বিচারমন্ত্রীকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতারণার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রতিটি অভিযোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে মেংয়ের সর্বোচ্চ ৩০ বছর করে কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এ চীনা নাগরিককে আটকের ঘটনায় অটোয়া ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিংয়ের উত্তেজনা আরও প্রকাশ্য হয়েছে। মেংকে ছেড়ে দেওয়া না হলে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে চীন কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কও করেছে।

ভ্যাঙ্কুভারের আদালত মেংকে জামিন দিলেও কড়া নজরদারিতে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে।

কভরিগের পর বুধবার স্পেভরকে আটক করার খবরও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি সপ্তাহে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানিয়েছিলেন স্পেভর, এরপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ নেই।

স্পেভর উত্তর কোরিয়ার কাছে চীনের সীমান্তবর্তী শহর ডানডংয়ে ব্যবসা করেন। তার সঙ্গে উত্তর কোরীয় সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে বলেও বিবিসি জানিয়েছে।

কভরিগকে আটকের পর কানাডার কর্মকর্তারা এ ঘটনার সঙ্গে মেংয়ের গ্রেপ্তারকাণ্ডের কোনো যোগসাজশ নেই বলে দাবি করেছিলেন।

থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজে) হয়ে কাজ করা সাবেক এ কূটনীতিককে বেইজিং কেন আটক করা হয়েছে অটোয়া সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও পরে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়,‘চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলে এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতসন্দেহে’ করভিগকে আটক করা হয়েছে।

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড করভিগের বিষয়টি নিয়ে সরাসরি চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান।

একইদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুইলামো বেরুবে চীনে স্পেভরের ‘নিখোঁজের’ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বৃহস্পতিবার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলে এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতসন্দেহে’ স্পেভরের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলেও নিশ্চিত করেছে।

কানাডার এ ব্যবসায়ী পায়েকতু কালচারাল এক্সচেঞ্জ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালান, যা উত্তর কোরিয়ায় বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক ও পর্যটন বিষয়ক ভ্রমণের আয়োজন করে থাকে।

উত্তর কোরিয়ায় নিয়মিত যাতায়াত থাকা স্পেভর প্রায়ই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোরিয়ান ইস্যুতে কথাও বলেন। ২০১৩ সালে সাবেক বাস্কেটবল তারকা ডেনিস রডম্যানের পিয়ংইয়ং সফরে সহায়তা করার পর কানাডীয় এ ব্যবসায়ীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

রডম্যান উত্তর কোরিয়ার বর্তমান শীর্ষ নেতা কিম জং উনের ব্যক্তিগত বন্ধু।

রোববার করা সর্বশেষ টুইটে স্পেভর সিউলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন। সোমবার তার দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকার কথা থাকলেও তিনি সেখানে পৌঁছাননি।