হুয়াওয়ে নির্বাহীর বিরুদ্ধে মামলায় নাক গলাতে পারেন ট্রাম্প

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আরো অবনতি ঠেকাতে প্রয়োজনে চীনা টেলিকম জায়ান্টের শীর্ষ নির্বাহী মেং ওয়ানঝৌয়ের বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগের মামলায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2018, 02:03 PM
Updated : 12 Dec 2018, 02:03 PM

হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে মঙ্গলবার রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “দেশের জন্য যদি ভাল হয়, চীনের সঙ্গে এ যাবৎকালের একটি বড় বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য যদি সহায়ক হয়- এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার- জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যা ভাল- তার জন্য আমি নিশ্চয়ই প্রয়োজনে (মামলায়) হস্তক্ষেপ করব।”

গত ১ ডিসেম্বর ভ্যাঙ্কুভারে চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ে- এর প্রতিষ্ঠাতার মেয়ে এবং প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝৌকে গ্রেপ্তার করে কানাডা পুলিশ। মঙ্গলবার কানাডার আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে।

মেংয়ের বিরুদ্ধে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে। এ অভিযোগেই কানাডায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া, ইরানের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে জালিয়াতি করার অভিযোগে বিচারের জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।

মেংয়ের বিরুদ্ধে বহুজাতিক বিভিন্ন ব্যাংককে ইরানের সঙ্গে লেনদেন নিয়ে বিভ্রান্ত করা এবং প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে। তার দেওয়া ভুল তথ্যের কারণে ব্যাংকগুলো ইরানের উপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা লংঘনের দায়ে বিশাল অংকের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতারণার এ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রতিটি অভিযোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে মেংয়ের সর্বোচ্চ ৩০ বছর করে কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মেং কে যুক্তরাষ্ট্রে চান কিনা জিজ্ঞেস করা হলে ট্রাম্প বলেন, তিনি আগে দেখতে চান চীন কি অনুরোধ করছে। তবে মেংয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কানাডার আদালত  তিনদিনের শুনানি শেষে ১ কোটি কানাডিয়ান ডলার জামানতের বিনিময়ে মঙ্গলবার মেংকে জামিন দিলেও শর্ত অনুযায়ী ৪৬ বছর বয়সী এ নারীকে পায়ের গোড়ালিতে সার্বক্ষণিক একটি নজরদারি ডিভাইস পরে থাকতে হবে।

মেংকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হবে কিনা, তা নিয়ে কানাডায় মামলা চলছে। বিচারক বহিঃসমর্পণের পক্ষে রায় দিলে হুয়াওয়ে’র এ শীর্ষ নির্বাহীকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে কিনা সে বিষয়ে কানাডার বিচারমন্ত্রীকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সমর্পণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা নজরদারির অংশ হিসেবে রাত ১১টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত মেংকে ভ্যাঙ্কুভারে নিজের বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। তার সব পাসপোর্ট ও ভ্রমণ ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে এবং বাইরে বের হলে  সঙ্গে নিতে হবে পাহারায় নিয়োজিত রক্ষীদের।

আগামী বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মেংকে ফের কানাডার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৪৬ বছরের মেং তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

মেং গ্রেপ্তার ঘটনার পর চীন এরই মধ্যে কানাডার এক সাবেক কূটনীতিককে আটক করেছে বলেও খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের। মাইকেল কভরিগ নামের ওই কূটনীতিকের আটক বিষয়ে কানাডার চীনা দূতাবাসের তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মেংকে আটকের ঘটনায় অটোয়া ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিংয়ের উত্তেজনা আরও দৃশ্যমান হয়েছে। মেংকে ছেড়ে দেওয়া না হলে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কও করেছে বেইজিং।

ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধে বিরতির সম্ভাবনায়ও এই ঘটনা কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বলছেন পর্যবেক্ষকরা।