সহিংসতা মোকাবেলায় এদিন ফ্রান্স জুড়ে প্রায় ৮৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলে জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপ। রাজধানী প্যারিসে সাঁজোয়া যান নামানোর ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
প্যারিসের বিখ্যাত ‘শঁজেলিজে’ স্কায়ারের সব দোকান ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কয়েকটি জাদুঘরও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জ্বালানি তেলের ওপর বাড়তি কর আরোপের প্রতিবাদে টানা তিন সপ্তাহ ধরে রাজধানী প্যারিসসহ ফ্রান্সের গুরুত্বপূর্ণ নগরীগুলোতে ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলন চলছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আয়োজিত এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীরা ট্যাক্সি চালকদের ব্যবহৃত ইয়েলো ভেস্ট পরে আন্দোলন করছে বলে এটা ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলন নামে পরিচিতি পেয়েছে।
কয়েক দশকের মধ্যে গত শনিবার প্যারিসে সবচেয়ে সহিংস বিক্ষোভ হয়। ওই দিন অন্তত চারজনের নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আন্দোলনের ডামাডোলে দেশজুড়ে সহিংসতা ও লুটতরাজ চলেছে, বেশ কয়েকটি স্থাপনা ও ভাস্কর্যও ভাঙা হয়েছে।
এই শনিবারও বিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করতে আশঙ্কায় তাই প্রশাসন আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এদিকে, বিক্ষোভ থামাতে আগামী বছরের বাজেট প্রস্তাব থেকেও জ্বালানির উপর বাড়তি করারোপের বিষয়টি বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের সরকার।
প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ বুধবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দিয়েছেন বলে খবর বিবিসির।
যদিও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখতে গত মঙ্গলবারই তিনি ছয় মাসের জন্য ওই বাড়তি কর নেওয়া স্থগিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তারপরও মুখোশ ও হলুদ জ্যাকেট পরিহিত আন্দোলনকারীরা দমছে না। ধীরে ধীরে ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের মঞ্চ হয়ে উঠছে বলে ভাষ্য পর্যবেক্ষকদের।
পুলিশ বলছে, চরম ডান ও বামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি সহিংস দুর্বৃত্তরাও এ আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে দাঙ্গা সৃষ্টি করছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাতে সাড়া দেয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতায় আন্দোলন ফ্রান্সজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও এটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স চালক ও শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ দাবিতে মাঠে নেমেছে।
আন্দোলনের দৃশ্যমান নেতৃত্ব না থাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কোন প্রক্রিয়ায় আলোচনা হবে ফরাসী সরকারকে তা নিয়েও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।
বুধবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ফিলিপ বলেছিলেন, “সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত, এটা দেখাতে ২০১৯-র বাজেট বিল থেকেও বাড়তি করের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে।”
এ সিদ্ধান্তকে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জন্য ‘বড় ধরনের পরাজয়’ হিসেবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও বাজেট ঘাটতি মেটাতে ম্যাক্রোঁ জ্বালানির ওপর বাড়তি করারোপ খুবই প্রয়োজনীয় বলে আগে মন্তব্য করেছিলেন।