জ্বালানি কর বাড়ানোর প্রস্তাব বাতিল করল ফ্রান্স

জ্বালানি তেলের বাড়তি কর নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সহিংস বিক্ষোভ থামাতে আগামী বছরের বাজেট প্রস্তাব থেকেও ওই বাড়তি করারোপের বিষয়টি বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2018, 07:44 AM
Updated : 6 Dec 2018, 07:44 AM

প্রধানমন্ত্রী এদুয়া ফিলিপ বুধবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণাও দিয়েছেন বলে খবর বিবিসির।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার দুয়ার খোলা রাখতে আগের দিনই তিনি ছয় মাসের জন্য ওই বাড়তি কর নেওয়া স্থগিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তিন সপ্তাহের এ ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলন এরই মধ্যে ফ্রান্সের সব গুরুত্বপূর্ণ শহরে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আয়োজিত এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভে ট্যাক্সি চালকদের ব্যবহৃত ইয়েলো ভেস্ট পরে অংশ নিচ্ছেন প্রতিবাদকারীরা। এখন পর্যন্ত এ আন্দোলনে অন্তত চারজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আন্দোলনের ডামাডোলে দেশজুড়ে সহিংসতা ও লুটতরাজ চলেছে, বেশ কয়েকটি স্থাপনা ও ভাস্কর্যও ভাঙা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করেও মুখোশ ও হলুদ জ্যাকেট পরিহিত আন্দোলনকারীদের দমানো যায়নি। ধীরে ধীরে এ ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের মঞ্চ হয়ে উঠছে বলে ভাষ্য পর্যবেক্ষকদের।

পুলিশ বলছে, চরম ডান ও বামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি সহিংস দুর্বৃত্তরাও এ আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে দাঙ্গা সৃষ্টি করছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ। যদিও তাতে সাড়া মেলেনি।

আন্দোলনকারীদের একাংশ বলছেন, তারা কট্টরপন্থি বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়েছেন। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করতেই এ হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য তাদের।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতায় আন্দোলন ফ্রান্সজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও এটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স চালক ও শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ দাবিতে মাঠে নেমেছে।

আন্দোলনের দৃশ্যমান নেতৃত্ব না থাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কোন প্রক্রিয়ায় আলোচনা হবে ফরাসী সরকারকে তা নিয়েও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।

মধ্যস্থতার পথ খোলা রাখতে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ছয় মাসের জন্য জ্বালানির বাড়তি কর নেওয়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন।

শীত মৌসুমে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির যে পরিকল্পনা ছিল তাও স্থগিত রাখা হচ্ছে বলে জানান ফিলিপ। গাড়ির নির্গত ধোঁয়া পরীক্ষার নিয়মকানুন কঠোরের ব্যাপারেও একই সিদ্ধান্ত হয়।

বুধবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ফিলিপ বলেন, “সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত, এটা দেখাতে ২০১৯-র বাজেট বিল থেকেও বাড়তি করের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে।”

এ সিদ্ধান্তকে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জন্য ‘বড় ধরনের পরাজয়’ হিসেবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও বাজেট ঘাটতি মেটাতে ম্যাক্রোঁ জ্বালানির ওপর বাড়তি করারোপ খুবই প্রয়োজনীয় বলে আগে মন্তব্য করেছিলেন।