ফ্রান্স: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসছে না ‘ইয়েলো ভেস্ট’

ফ্রান্সের ‘ইয়োলে ভেস্ট’ আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী এদুয়া ফিলিপের সঙ্গে নির্ধারিত একটি বৈঠক থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2018, 08:00 AM
Updated : 4 Dec 2018, 08:01 AM

মঙ্গলবার দুই পক্ষের মধ্যে ওই বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

জ্বালানি তেলের ওপর বিতর্কিত কর আরোপের প্রতিবাদে গত মাসের মাঝামাঝি থেকে এ ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলন শুরু হয়।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আয়োজিত এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভে ট্যাক্সি চালকদের ব্যবহৃত ইয়েলো ভেস্ট পরে অংশগ্রহণ নিচ্ছে প্রতিবাদকারীরা। এ পর্যন্ত এ ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। আন্দোলনের ডামাডোলে দেশজুড়ে সহিংসতা ও লুটতরাজ চলছে, বেশ কয়েকটি স্থাপনা ও ভাস্কর্যও ভাঙা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করেও মুখোশ ও হলুদ জ্যাকেট পরিহিত আন্দোলনকারীদের দমানো যায়নি। ধীরে ধীরে এ ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের মঞ্চ হয়ে উঠছে বলে ভাষ্য পর্যবেক্ষকদের।

চরম ডান ও বামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি সহিংস দুর্বৃত্তরাও এ আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে দাঙ্গা সৃষ্টি করছে বলে ধারণা পুলিশের।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ। কিন্তু সোমবারই বিক্ষোভকারীরা ওই বৈঠকে অংশগ্রহণে নারাজি জানায়।

আন্দোলনকারীদের একাংশ বলছেন, তারা কট্টরপন্থি বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়েছেন। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করতেই এ হুমকি বলেও মন্তব্য তাদের।

বিবিসি বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতায় আন্দোলন ফ্রান্সজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লেও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও এটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর অভিযোগ, তার নেওয়া সংস্কার কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতেই বিরোধীরা এ আন্দোলনকে ‘হাইজ্যাক’ করেছে।

সমস্যার সমাধানে বেশি মনোযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে ম্যাক্রোঁ সার্বিয়ায় তার একটি নির্ধারিত সফরও বাতিল করেছেন। সোমবার এক জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকও করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

সংকট সমাধানে সব ধরনের বিকল্পের কথা বিবেচনায় রাখতে ওই বৈঠকে জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি, বলেছেন মন্ত্রীরা।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ফ্র্যাঙ্ক রিস্তের পরে সাংবাদিকদের জানান, আসছে দিনগুলোতে প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালাবেন। যদিও কিভাবে এ উদ্যোগ নেওয়া হবে তার বিস্তারিত বলেননি রিস্তের।

সোমবার ফিলিপ বিরোধীদলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া কট্টর ডানপন্থি নেতা মেরি লো পেন বিক্ষোভ দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। ৫০ বছরের মধ্যে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জনগণের বিরুদ্ধে গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার ব্যাপারেও ম্যাক্রোঁকে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

আন্দোলনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষয়ক্ষতি জানতে অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লো মেয়ার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসেছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ইয়োলো ভেস্ট আন্দোলনের কারণে তাদের বেচাবিক্রির হার কমে গেছে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। রেস্তোরাঁগুলোর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ, বলেছেন ব্রুনো।

ম্যাক্রোঁ বলছেন, পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চিন্তা থেকেই জ্বালানির ওপর বাড়তি এ কর বসিয়েছে তার সরকার। বিক্ষোভকারীরা বিশেষ করে গ্রাম ও মফস্বলের জনগণ, যারা নিজেদের গাড়ির ওপরই অনেকখানি নির্ভরশীল তারা এ বক্তব্য মানতে নারাজ।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি পরে এ ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনে আরও যুক্ত হয়েছে সরকারবিরোধী নানা ধরনের ক্ষোভ, গ্রামাঞ্চলের অনুন্নয়ন, জীবনযাত্রার বাড়তি ব্যয় ও ম্যাক্রোঁর অর্থনৈতিক সংস্কারবিরোধী ক্ষোভ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ আন্দোলনে দৃশ্যমান কোনো নেতৃত্ব না থাকায় এতে কট্টর বাম থেকে শুরু করে কট্টর ডানপন্থি সব মতামতের মানুষ যুক্ত হয়ে পড়েছে।

সোমবারও ‘ইয়োলো ভেস্ট’ পরিহিত জনা পঞ্চাশেক বিক্ষোভকারী মার্শেইর কাছে ফস-সার-মের বন্দরের কাছে একটি বড় জ্বালানি সরবরাহ কেন্দ্রে প্রবেশ আটকে দেয়। বিক্ষোভের কারণে ফ্রান্সের প্রায় সব পেট্রল স্টেশনই জ্বালানিশূন্য হয়ে পড়েছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি।

এদিন প্রায় ১০০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের শিক্ষা ও পরীক্ষাপদ্ধতি সংস্কারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবার সংস্কারের প্রতিবাদে সোমবার কর্মসূচি পালন করেছে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকরাও।

শিক্ষার্থী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এ প্রতিবাদের সঙ্গে ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনের কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।