খাশুগজির হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় খুলতে পারে হত্যা রহস্যের জট

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশুগজির বেশকিছু ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ খুলে দিতে পারে তার হত্যা রহস্যের জট। এমনই চার শতাধিক মেসেজ প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2018, 06:19 PM
Updated : 3 Dec 2018, 07:43 PM

সোমবার প্রকাশিত এ মেসেজগুলোতে দেখা গেছে, জনসমক্ষে খাশুগজি সৌদি আরব এবং দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনায় মেপে কথা বললেও ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় কোনো রাখঢাক করতেন না।

খাশুগজি হোয়াটসঅ্যাপে অপর এক নির্বাসিত সৌদি নাগরিকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে মেসেজগুলো আদান-প্রদান করেছিলেন। তিনি হচ্ছেন, কানাডা প্রবাসী সৌদি নাগরিক ওমর আব্দুল আজিজ। খাশুগজির সঙ্গে আলাপের ভিডিও, ছবি এমনকি ভয়েস রেকর্ডিংও সিএনএন’কে দেখিয়েছেন তিনি।

খাশুগজি যে তার দেশের ক্ষমতাধর যুবরাজের (এমবিএস) ওপর মহাক্ষাপ্পা ছিলেন তা মেসেজগুলো পড়লেই বোঝা যায়।

গত ২ অক্টোবর তুরস্কে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাশুগজি খুন হওয়ার আগে এ বছরেই আব্দুল আজিজ কে পাঠানো এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় তিনি সৌদি যুবরাজ বিন সালমানকে ‘জানোয়ার’, ‘প্যাক ম্যান’ বলে গালি দিয়েছিলেন।

গত বছর মে মাসে সৌদি আরবে বেশ কিছু আন্দোলনকর্মীকে ধরপাকড় করা শুরু করেন যুবরাজ সালমান। ওই সময়ই আবদুল আজিজকে দেওয়া এক বার্তায় খাশুগজি গেম চরিত্র ‘প্যাক ম্যানের’ সঙ্গে যুবরাজের তুলনা করে বলেন, “সে যতই শিকার খায়, ততই আরো বেশি খেতে চায়। এখন যারা যুবরাজকে সাধুবাদ জানাচ্ছে তারাও একসময় তার করাল গ্রাসে পড়লে আমি অবাক হব না।”

হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে এমন আলাপচারিতার এক পর্যায়ে খাশুগজি এবং আব্দুল আজিজ দুজনই কথাকে কাজে পরিণত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সৌদি আরবকে জবাবদিহি করানোর জন্য তারা অনলাইনে যুবআন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন।

আব্দুল আজিজ সিএনএন’কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “জামাল খাশুগজির বিশ্বাস ছিল সৌদি যুবরাজই হচ্ছেন যতসব নষ্টের গোঁড়া এবং একটি মূর্তিমান সমস্যা, তাই তাকে থামাতে হবে।”

কিন্তু চলতি বছর অগাস্টে তাদের এ বার্তা চালাচালির বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেছে বলে তার সন্দেহ হয়। আর তখনই খাশুগজি বিপদ আঁচ করতে পারেন। শঙ্কিত খাশুগজি তখন লেখেন, “আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।” এর মাত্র দু’মাস পরই তিনি খুন হন।

আব্দুল আজিজের ধারণা, ইসরাইলের একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি সফটওয়্যার দিয়ে তার ফোন হ্যাক করে  মেসেজগুলো হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। রোববার তিনি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

সিএনএন কে তিনি বলেন, “জামালের সঙ্গে যা হয়েছে তাতে আমার ফোন হ্যাক হওয়াটাই মূল ভূমিকা রেখেছে। কথাটা বলতে আমার সত্যি কষ্ট হচ্ছে। এ অপরাধবোধ আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।”

গত মাসে আব্দুল আজিজ প্রথম খাশুগজির সঙ্গে তার কথোপকথনের বিষয়টি জনসমক্ষে বলেছিলেন। ওই সময়ই তিনি তার ফোন হ্যাকড হওয়ার কথা জানতে পারেন টরন্টো ইউনিভার্সিটি সিটিজেন ল্যাবের গবেষকদের কাছ থেকে।

আব্দুল আজিজ কানাডায় কলেজে পড়ার সময় থেকেই সৌদি আরবের সমালোচনা করতেন। বিষয়টি সৌদি সরকারের নজরে আসার পর তার স্কলারশিপ বাতিল হয়েছিল। কানাডা ২০১৪ সালে তাকে আশ্রয় দেয় এবং এর তিন বছর পর তিনি দেশটির স্থায়ী নাগরিকত্ব পান।

২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের অগাস্ট পর্যন্ত নিয়মিত আলাপ চালিয়ে গেছেন আব্দুল আজিজ ও খাশুগজি। তারা সৌদি যুবকদের সংগঠিত করে ইলেক্ট্রনিক আর্মি গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌদি সরকারের প্রচারণার স্বরূপ উন্মোচন করা ছিল তাদের লক্ষ্য।

তাছাড়া, সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনা নথিবদ্ধ করা এমনকি মোবাইলে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানানোরও পরিকল্পনা ছিল তাদের।