ক্রাউন প্রিন্সের ‘ভূমিকা’ তদন্তের আহ্বান মার্কিন সিনেটরদের

তুরস্কে কনসুলেটের ভেতর সাংবাদিক জামাল খাশুগজিকে মেরে ফেলার ঘটনায় সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ভূমিকা তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন সিনেটররা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2018, 08:33 AM
Updated : 21 Nov 2018, 08:33 AM

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে লেখা এক চিঠিতে মঙ্গলবার তারা খাশুগজি খুনের ঘটনায় দ্বিতীয় আরেকটি তদন্তের অনুরোধ জানান বলে খবর বিবিসির।

কংগ্রেসের বৈদেশির সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান সিনেটররা এ চিঠিটি লিখেছেন।

‘গ্লোবাল ম্যাগনিৎস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবলিটি অ্যাক্টের’ আওতায় চিঠিটি লেখায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে ১২০ দিন সময় পাচ্ছেন।

কনসুলেটের ভেতর সাংবাদিক খুনের ঘটনায় তুমুল চাপের মধ্যেও ট্রাম্প এর আগে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছিলেন।

ব্যক্তিগত কাগজপত্র যোগাড়ে গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে গিয়েছিলেন খাশুগজি । এরপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

বছরখানেক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা সাংবাদিক জামাল খাশুগজি মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে ওয়াশিংটনে পোস্টে নিয়মিত কলাম লিখতেন।

তাকে কনসুলেটের ভেতরেই সৌদি গুপ্তচররা খুন করে লাশ গুম করে ফেলেছে বলে প্রথম থেকে দাবি করে আসছে আঙ্কারা। শুরুর দিকে রিয়াদ অভিযোগটি উড়িয়ে দিলেও পরে কনসুলেটের ভেতর খাশুগজির মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নেয়।

তুরস্ক ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের নির্দেশেই খাশুগজিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণার কথা জানিয়েছে। গত সপ্তাহে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিআইএর মূল্যায়নেও একই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

রিয়াদ এ ভাষ্য প্রত্যাখ্যান করে বলছে, সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্সের কোনো ধরনের যোগসাজশ নেই।

মঙ্গলবার এ প্রসঙ্গে দেওয়া এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক হত্যায় মোহাম্মদ ‘ভালোভাবেই জড়িত থাকতে পারেন’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

“হয়তো তিনি করেছেন, হয়তো করেননি,” বলেছেন ট্রাম্প। খাশুগজি খুনের বিষয়টি সিআইয়ে ‘শতভাগ’ নিরূপণ করতে পারেনি বলেও পরে মন্তব্য করেছেন তিনি।

প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্যের পরপরই সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির পক্ষে রিপাবলিকান সিনেটর বব কোর্কার ও ডেমোক্রেট সিনেটর বব মেনডেজ একটি বিবৃতি দেন।

তারা সুনির্দিষ্টভাবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের বিষয়ে দ্বিতীয় আরেকটি তদন্তে মনোযোগী হতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান।

‘বিদেশি কোনো ব্যক্তি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও মানবাধিকারের ভয়াবহ লংঘনে দায়ী কি না’ তদন্তে তাও খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন সিনেটররা।

রিপাবলিকান পার্টির আরেক সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, কংগ্রেসে সৌদি আরব ও রাজপরিবারের দায়িত্বশীল সদস্যদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট উভয় দলের সদস্যদেরই শক্ত সমর্থন পাওয়া যাবে বলেই তিনি প্রত্যাশা করছেন।

ট্রাম্প এর আগে ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, “পৃথিবী খুবই বিপজ্জনক স্থান।”

সৌদি আরব ‘র‌্যাডিক্যাল ইসলামিক টেরোরিজমের বিরুদ্ধে লড়াই পরিচালনা করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার’ খরচ করেছে, অপরদিকে ইরান ‘মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বহু মার্কিন ও অন্যান্য নিরপরাধ লোককে হত্যা করেছে’, বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

সৌদি বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি ও অস্ত্র ক্রয়চুক্তির বহালের বিষয়েও জোর দিয়েছেন তিনি।

“আমরা যদি বোকার মতো এসব চুক্তি বাতিল করি তবে এর সুবিধাভোগী হবে রাশিয়া ও চীন,” বলেছেন এ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।

জামাল খাশুগজির হত্যাকাণ্ডকে ‘ভয়াবহ’ অ্যাখ্যা দেওয়া সত্বেও ট্রাম্প বলেছেন, “আমাদের দেশ, ইসরায়েল ও ওই অঞ্চলের অন্যান্য অংশীদারদের স্বার্থ নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের মতো একনিষ্ঠ অংশীদারের সঙ্গেই থাকতে ইচ্ছুক।”

আর্জেন্টিনায় আগামী সপ্তাহে জি২০ বৈঠকে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান উপস্থিত থাকলে তার সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারেও আগ্রহের কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্পের বিবৃতির কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভেদ জারিফ টুইটারে বলেছেন, সৌদি বর্বরতার বিবৃতিতে ইরানকে দায়ী করে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য ‘লজ্জাজনক’।

“সম্ভবত আমরা ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের জন্যও দায়ী, কেননা আমরা জঙ্গলে নিড়ানি দিয়ে সাহায্য করি না, যেমনটা ফিনিশরা করে,” টিটকারি জারিফের।