হোয়াইট হাউসের কাজে ‘ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার’ ট্রাম্প কন্যার

ইভাঙ্কা ট্রাম্প গত বছর হোয়াইট হাউজের কাজে ব্যক্তিগত ইমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কয়েকশ বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2018, 09:20 AM
Updated : 20 Nov 2018, 09:22 AM

সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তিগত ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন, ইমেইল সংক্রান্ত এক পর্যালোচনায় এমনটাই উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ইভাঙ্কার আইনজীবীরা বলছেন, নিয়মকানুন সম্পর্কে অবহিত হওয়ার আগেই ট্রাম্পকন্যা ওইসব ইমেইল পাঠিয়েছিলেন।

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় তার বাবা প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে একই কাজের জন্য সমালোচনা করেছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে হিলারি ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার করে ‘যুক্তরাষ্ট্রকে বিপদে ফেলেছেন’ বলেও অভিযোগ ছিল ট্রাম্পের।

ওয়াশিংটন পোস্টের সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইভাঙ্কার পাঠানো বেশিরভাগ ইমেইলেই ব্যক্তিগত ও দৈনন্দিন সাধারণ বিষয়াদি থাকলেও কোনো কোনোটি কেন্দ্রীয় নথি সংরক্ষণ আইন লংঘন করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট কন্যা ব্যক্তিগত ইমেইল অ্যাকাউন্ট থেকে যেসব বার্তা পাঠিয়েছেন তার কোনোটিতেই ‘শ্রেণিবদ্ধ তথ্য’ ছিল না। মূলত নিয়ম সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাবের কারণেই ইভাঙ্কা এ কাজ করেছিলেন বলে দাবি তার।

বিষয়টি জানানোর পর থেকে ট্রাম্পকন্যা সরকারি কাজে আর কখনোই ব্যক্তিগত ঠিকানা ব্যবহার করেননি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এ সাফাই মানতে রাজি নন আমেরিকান ওভারসাইট গ্রুপের অস্টিন এভারস। ‘তথ্যের স্বাধীনতা’ আইনের আওতায় এ গোষ্ঠীটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই হোয়াইট হাউসের কাছে গত বছর ইভাঙ্কার ব্যক্তিগত ইমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের বিষয়টি উন্মোচিত হয়।

এভারস বলছেন, প্রেসিডেন্টের পরিবার আইনের উর্ধ্বে নয়।

“এখানে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে, কংগ্রেসের উচিত এসব দ্রুত খতিয়ে দেখা। আইন অনুযায়ী যেসব ইমেইল সংরক্ষিত রাখা দরকার ইভাঙ্কা কি সেগুলো উন্মোচন করেছেন? তিনি কি ব্যক্তিগত উদ্যোগে শ্রেণিবদ্ধ তথ্য বাইরে পাঠিয়েছেন,” বিবৃতিতে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন এভারস।

২০০৯ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালে হিলারি ক্লিনটন ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করে কর্মকর্তাদের বার্তা পাঠিয়েছিলেন। ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করতে এ বিষয়টিকে হাতিয়ার করেছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। হিলারির ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করার বিষয়টিতে ‘ওয়াটার গেইটের চেয়েও বড় কেলেঙ্কারি’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি।

‘অবৈধ’ এ কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে মন্তব্য করে দাপ্তরিক কাজে ডেমোক্রেট প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহারের ঘটনাটির ধারাবাহিক সমালোচনা করেছিলেন ট্রাম্প।

তিনি সেসময় রিপাবলিকানদের প্রচার সমাবেশগুলোতে হিলারিকে ‘জেলে ঢুকাও’ স্লোগান দিতেও উৎসাহ দিতেন; নির্বাচনে জিতলে ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহারকাণ্ডে ডেমোক্রেট প্রার্থীকে কারাগারে পাঠানোরও প্রতিশ্রুতি ছিল তার।

সেসময়ের তদন্তে হিলারি ও তার আইনজীবীরা ৩০ হাজারের মতো ইমেইলকে ‘ব্যক্তিগত বার্তা’ অ্যাখ্যা দিয়ে সেগুলো তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেননি। ট্রাম্প ওই বার্তাগুলো উন্মোচন করতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিলেন।

মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগেই হিলারি তার নিউ ইয়র্কের বাড়িতে ব্যক্তিগত ইমেইল সার্ভার তৈরি করেছিলেন। চার বছরের মন্ত্রীত্বকালে তিনি সব ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক বার্তা এই সার্ভার ব্যবহার করেই পাঠিয়েছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্য মার্কিন সরকার যে রাষ্ট্রীয় ইমেইল অ্যাকাউন্টটি খুলেছিল, হিলারি সেখান থেকে কোনো বার্তা পাঠাননি; এমনকি সেটি চালুও করেননি, বলছে বিবিসি। 

স্বাচ্ছন্দ্যের কারণেই ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করেছিলেন বলে পরে জানিয়েছিলেন ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল ভোটে হেরে যাওয়া ডেমোক্রেট প্রার্থী।