খাশুগজি হত্যা নিয়ে ঊর্ধ্বতন সৌদি কর্মকর্তার নতুন ভাষ্য

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশুগজি হত্যকাণ্ড নিয়ে সর্বশেষ আরেকটি নতুন ভাষ্য দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৌদি আরবের এক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2018, 02:22 PM
Updated : 21 Oct 2018, 08:39 PM

তার কথায় উঠে এসেছে তুরস্কে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাশুগজিকে হত্যার বিস্তারিত বিবরণ। গত ২ অক্টোবরে খাশুগজির কাছে পাঠানো ১৫ সৌদির একটি দল কিভাবে তাকে অপহরণের হুমকি-ধামকি দিয়ে পরে হত্যা করেছে সে কথাই বর্ণনা করেছেন তিনি।

কর্মকর্তাটি বলছেন, দলটির ওপর যে নির্দেশ ছিল তার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে আগেভাগেই বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলায় গোড়াতেই সব গলদ হয়ে যায়।

দলটি খাসুগজিকে জোর করে অপহরণের হুমকি দেয়। খাশুগজি তখন গলার স্বর চড়ালে তারা তার গলা চেপে ধরায় তিনি মারা যান। এরপর ওই সৌদি দলটির এক সদস্য খাশুগজির কাপড় খুলে তা পরেন, যাতে মনে হয় খাশুগজি কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে গেছেন।

খাশুগজি লাপাত্তা হওয়ার প্রায় দু’সপ্তাহ পর সৌদি আরব শনিবার স্বীকারোক্তি দিয়ে জানায়, তিনি কনস্যুলেটে ‘ঘুষাঘুষিতে’ মারা গেছেন। এর একঘণ্টা পরই আরেক সৌদি কর্মকর্তা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে খাশুগজি মারা যাওয়ার কথা বলেছিলেন।

আর এখন ঊর্ধ্বতন ওই সৌদি সরকারি কর্মকর্তা এক ভিন্ন আঙ্গিকে ঘটনাটির আদ্যোপান্ত জানালেন। সৌদি আরবের গোয়েন্দা নথির ভিত্তিতে এ কর্মকর্তা জানান, এক বছর আগে ভিন্নমতের কারণে নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো খাশুগজিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল সৌদি আরব সরকার।

সৌদি আরবের শত্রুরা যাতে সৌদি ভিন্নমতাবলম্বীদের দলে ভেড়াতে না পারে সে চেষ্টাতেই নেওয়া হয়েছিল ওই পদক্ষেপ। একাজ করার জন্য গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমেদ আল আসিরি গোয়েন্দা বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনী থেকে ওই ১৫ সদস্যের দল গঠন করে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পাঠান খাশুগজির সঙ্গে দেখা করে তাকে দেশে ফিরতে রাজি করানোর জন্য।

নির্দেশ ছিল আলোচনার মধ্য দিয়ে খাশুগজিকে রাজি করিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দেশে ফেরত আনার। এজন্য যতটুকু যা করা প্রয়োজন সে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল দলটিকে। আর সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে কাজ করা ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা কাহতানি আলোচনার জন্য তার এক কর্মচারিকেও ঠিক করে দিয়েছিলেন।

পরের ঘটনাটি যেভাবে গড়িয়েছে:

সৌদি কর্মকর্তা বলছেন, পরিকল্পনা মোতবেক সৌদি দলটি খাশুগজিকে ইস্তাম্বুলের বাইরে একটি নিরাপদ জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটকে রাখতে পারত। কিন্তু তারপরও খাশুগজি সৌদি আরবে ফিরতে না চাইলে তাকে ছেড়ে দিতে পারত।

কিন্তু তা না করে দলটি বাড়াবাড়ি করে ফেলায় এবং খুব দ্রুতই সহিংসতার আশ্রয় নেওয়ায় ঘটে বিপত্তি।

খাশুগজিকে কনসাল জেনারেলের কার্যালয়ে নেওয়ার পর মাহের মুতরেব নামের একজন তার সঙ্গে সৌদি আরবে ফেরার বিষয় নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু খাশুগজি তাতে কান না দিয়ে বলেন, বাইরে তার জন্য একজন অপেক্ষা করছে এবং তিনি ফিরে না গেলে সে তুরস্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

খাশুগজির প্রেমিকা হাতিস চেঙ্গিস রয়টার্সকে বলেছেন, খাসুগজি তাকে তার দুটো মোবাইল ফোন দিয়ে গিয়েছিলেন এবং অপেক্ষায় থাকতে বলে গিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, তিনি (খাশুগজি) ফিরে না এলে চেঙ্গিস যেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সহযোগীকে ফোন করেন।

সৌদি কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, কনসাল জেনারেলের কার্যালয়ে মুতরেব নামের ওই ব্যক্তি কূটনৈতিক প্রথা ভঙ্গ করছেন বলে তাকে ধমকেছিলেন খাশুগজি। তিনি প্রশ্ন করে বলেছিলেন, “আপনি কি চান? আমাকে অপহরণ করতে চান?” মুতরেব তখন বলেন, “হ্যাঁ, আমরা আপনাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাব। অপহরণ করব আপনাকে।”

এভাবে কথা বলাটা খাশুগজিকে ভয়ভীতি দেখানোরই অপচেষ্টা ছিল এবং যে উদ্দেশে দলটিকে পাঠানো হয়েছিল সে উদ্দেশ্য এতে সাধন হয় না বলেই মন্তব্য করেছেন ঊর্ধ্বতন ওই সৌদি কর্মকর্তা।

এ ধরনের হুমকি-ধামকির জবাবে খাশুগজি গলার স্বর চড়ানোয় সৌদি দলটি আতঙ্কিত হয়ে তড়িঘড়ি তাকে চুপ করাতে উদ্যত হয়। তারা তার গলা জাপটে ধরে মুখ ঢেকে দেয়। এভাবে খাশুগজির চিৎকার বন্ধ করতে গিয়ে শেষে তার দমটাই বন্ধ হয়ে যায়।

পরে এ খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে দলটি একটি কম্বলে মৃতদেহটি জড়িয়ে কনসুলারের গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় এক দোসরের হাতে তুলে দেয় সেটি সরিয়ে ফেলার জন্য।