সৌদি ভাষ্যকে অসম্পূর্ণ বলেছে ট্রাম্প, ইউরোপীয় ইউনিয়ন

সাংবাদিক জামাল খাশুগজির মৃত্যু নিয়ে সৌদি আরবের বক্তব্যকে অসম্পূর্ণ বলেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2018, 09:12 AM
Updated : 21 Oct 2018, 09:12 AM

দুই সপ্তাহ ধরে অস্বীকার করার পর ‘নিখোঁজ’ সাংবাদিক খাশুগজি তাদের ইস্তাম্বুলের কনসুলেট ভবনে মারা গেছেন বলে শুক্রবার স্বীকার করে সৌদি আরব। 

দেশটির এ বক্তব্যকে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ বললেও খাশুগজির মৃত্যু নিয়ে ওঠা অন্যান্য প্রশ্নে ইইউ নেতাদের সুরে ট্রাম্প গলা মিলিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশটির ওপর চাপ আরও বৃদ্ধি পেল বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

সৌদি রাজপরিবারের নীতির কট্টর সমালোচক খাশুগজিকে মেরে ফেলার এ ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরবের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

খাশুগজিকে হত্যার ঘটনায় রিয়াদ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও ১৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।

সৌদি আরবের এসব পদক্ষেপে ‘সন্তুষ্ট কিনা’ জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, তিনি এ বিষয়ে আরও উত্তর খুঁজছেন।

“না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা উত্তর না পাব ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হব না। কিন্তু এটা প্রথম বড় পদক্ষেপ, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এটা ভাল। কিন্তু আমি উত্তর জানতে চাই,” নেভাদায় যাওয়ার পথে বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

খাশুগজির মৃত্যু নিয়ে রিয়াদের ব্যাখ্যাকে ‘অপর্যাপ্ত’ অ্যাখ্যা দিয়ে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা অন্যান্য দেশের উচিত হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জার্মানি।

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, সৌদি সাংবাদিকের মৃত্যু বিষয়ে রিয়াদের বক্তব্য ‘যথেষ্ট নয়’।

“তার (খাশুগজি) মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সৌদি আরবের কাছ থেকে স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করছি আমরা। ইস্তাম্বুলের কনসুলেটের ঘটনাবলী নিয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা অপর্যাপ্ত,” যৌথ বিবৃতিতে বলেন তারা।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাস সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে প্রবেশের পর খাশুগজির কী পরিণতি হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চেয়েছে ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-য়ুভেস লা দ্রিয়ান খাশুগজি ইস্তাম্বুলের কনসুলেট ভবনে প্রবেশের পর যা হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচক হিসেবে পরিচিত সৌদি সাংবাদিক খাশুগজিকে কনসুলেট ভবনের ভেতরেই সৌদি গুপ্তচরদের একটি দল হত্যা করে তার দেহ টুকরা টুকরা করে ফেলে বলে সন্দেহ তুর্কি কর্মকর্তাদের। খাশুগজি গত এক বছর ধরে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন।

খাশুগজির মৃত্যু নিয়ে ট্রাম্প এর আগে সৌদি আরবকে ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগের হুমকি এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও মার্কিন অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এবং ইরান ও ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র রিয়াদের ব্যাপারে তার গলায় সবসময়ই ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সুর।

নিজেদের কনসুলেটে খাশুগজির মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নিলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি সৌদি আরব। নিহত সাংবাদিকের মৃতদেহের বিষয়েও কিছু জানে না বলে দাবি করেছে দেশটি। 

৫৯ বছর বয়সী খাশুগজির মৃত্যু নিয়ে সৌদি কনসুলেটের ভেতর যা হয়েছে তা নিয়ে‘ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ সম্ভবত কিছু জানতেন না’ বলেও ধারণা করছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

খাশুগজি হত্যাকাণ্ডে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের দায় আছে কি না, তার উত্তর খুঁজছে রিয়াদের পশ্চিমা মিত্ররা। ট্রাম্পও খাশুগজির মৃতদেহ কোথায়, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের ধারণা সৌদি রাজপরিবারের নীতির সমালোচক সাংবাদিকের মৃতদেহ ইস্তাম্বুল লাগোয়া বেলগ্রাড বন ও ইয়ালোভা শহরের কোনো দুর্গম স্থানে পুঁতে ফেলা হয়েছে। ইয়ালোভা শহরটি ইস্তাম্বুল থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে।

তুর্কি তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, খাশুগজি যেদিন ইস্তাম্বুলের কনসুলেট ভবনে ঢুকেছিলেন, সেদিনই দুটি বিমানে করে সৌদি আরব থেকে ১৫ জনের একটি দল কনসুলেটে প্রবেশ করেছিল। সৌদি গুপ্তচরদের ওই দলটিই খাশুগজিকে হত্যা করে সেদিনই তুরস্ক ছাড়ে বলেও অনুমান তাদের।